Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেবি আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, বরণের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কারিগর 


১২ অক্টোবর ২০১৮ ১২:১৮

।। জগেশ রায়, জবি করেসপন্ডেন্ট ।।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গাকে বরণের প্রস্তুতিতে তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে সমস্ত কাজই করতে হয় পঞ্জিকা দেখে, তাই সময় মতো কাজ শেষ করতে দম ফেলারও সময় পাচ্ছে না ব্যস্ত কারিগররা।

আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এর মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে সব আয়োজন। মাটির প্রলেপে দক্ষ শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার অবয়ব। রং, তুলির কাজ শেষ করেই প্রতিমা সজ্জায় মনোযোগ শিল্পীদের। দুর্গাপূজার প্রধান উপকরণ হচ্ছে মহামায়া ভগবতী মা দুর্গার প্রতিমা এবং তার সঙ্গে থাকবে অসুর ও গণেশ।

একটি প্রতিমা সর্বনিম্ন ৪ হাত এবং সর্বোচ্চ চাহিদানুযায়ী তৈরি করা যায়। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষীবাজার, শ্যামবাজার, প্যারীদাস রোড, মদনমোহন দাস লেন, গোয়ারনগর, সুতারনগর, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া সর্বত্রই চলছে পূজার জোর প্রস্তুতি। পূজা মন্ডপকে ঘিরে চলছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় জমিদার বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, একই সঙ্গে মোট ১২টি পূজা মন্ডপের প্রতিমা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কারিগররা। ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো প্রতিমায় রং তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। চলছে কাপড় পরিয়ে সাজসজ্জার কাজ।

প্রতিমার কারিগর ‌নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ‘একটি ১২ হাতের প্রতিমা তৈরি করতে একাজনের ৮-১০ দিন সময় লাগে। আর ৪ হাতের প্রতিমার ক্ষেত্রে ৩-৪ দিন। আমরা কাজ শুরুর পর থেকে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছি যেহেতু এ মাসের ১৫ তারিখ থেকে পুজা। তাই অবশ্যই এর আ‌গের দিনের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

কর্মব্যস্ত মৃৎশিল্পী দুলাল চন্দ্র পাল বলেন, ‘গতকাল রাতে, চারটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। আবার সকাল থেকে শুরু করেছি। মরি-বাঁচি যাই হোক পূজার কাজ সময়মতই তো শেষ করতে হবে।’

প্রতিমা তৈরি শেষে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজার আনুষ্ঠানিকতা করেন পুরোহিতরা। শাঁখারী বাজারের পুরোহিত সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মোট একশ উপকরণ দিয়ে পূজা করতে হয়। শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দশ ভুজা দেবী কৈলাশের স্বামীগৃহ থেকে ঘোটকে চড়ে রওনা দেবেন বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

শাঁখারী বাজারের সঙ্ঘ মিত্র পুজা কমিটি, নব কল্লোল সংসদ, নতুন কুড়ি সংসদ, দুর্গা বাড়ি সংসদ, সূর্যতারা, কালাচাঁন ঝৌঁ ট্রাস্ট, নব বাণী, দুর্গা মন্দির, প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে মোট ৯টি পূজা উদযাপন কমিটি রয়েছে।

শাঁখারীবাজারের প্রতিদ্বন্দ্বি পূজাকমিটির সাধারণ সম্পাদক উৎপল কুমার শেখর ঘোষ বলেন, ‘দেশ জুড়ে শারদীয় দূর্গা পূজাকে ঘিড়ে আবেগ আর সম্প্রীতির গভীর মিলনমেলার উৎসব চলে। দূর্গাপূজা কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয় গোটা বাঙ্গালীর উৎসব।’ তবে বিগত সময়ের চেয়ে এবার আরও বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করেন তিনি।

সঙ্ঘ মিত্র পুজা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ নাগ বলেন, ‘দুর্গা পুজা উদযাপনের সরকার পাঁচ শ কেজি চাল বরাদ্ধ দেয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শুধু পুজার প্রতিমা তৈরীতেই তাদের খরচ ৬ লক্ষ টাকারও বেশি।

এ ছাড়া এবার জিনিস পত্রের দাম তুলনা মুলক অনেক বেশি। এ সময় বিদ্যুৎ নাগ বলেন, ‘এবার পূজায় রাশ হবে বেশি। অর্থাৎ পূজায় চাপ পড়বে প্রচুর। কারণ এবার আর অন্য কোনো সরকারি বেসরকারি বন্ধ নাই। সবাই ঢাকায়। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসনকে আর বেশি করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিতে হবে। যদিও দেশের সাথে সাথে আমাদের দিক থেকেও সার্বিক পরিস্থিতি অন্যান্য সকল সময়ের চেয়ে ভালো।’

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি লালবাগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘে করতে লালবাগ বিভাগের পক্ষে প্রশাসন ইতিমধ্যে সব ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। পোশাকধারী পুলিশের সাথে সাথে সাদা পোষাকেও তৎপর থাকবে। ডিএমপি লালবাগ বিভাগের ছয় থানার মধ্যে ৫০টি পূজা মন্ডপ থাকবে। পারস্পারিক সম্প্রীতির এতো বড় একটি অনুষ্ঠানে যেন কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে কড়া নজর থাকবে প্রশাসনের।’

সারাবাংলা/জেআর/এমআই

দূর্গা দেবি পূজা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর