Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘তারেকের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না’


১২ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:২২

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উচিত দলীয় পদ থেকে সরে যাওয়া’— সুশীল সমাজের এমন পরামর্শ প্রত্যাখান করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’

শুক্রবার (১২ অক্টোবর ) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) তারেক রহমানের রায় নিয়ে দেশের একটি শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উচিত দলের নেতৃত্ব থেকে এখনই সরে দাঁড়ানো। এটা রাজনীতির নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন। বড় ধরনের রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে আসীন থাকা মোটেই সমীচীন নয়।’

এই প্র্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দলীয় তদন্তকারীর চক্রান্তে সাজানো মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা জানার পরও কেউ কেউ বিএনপি থেকে তার পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন।’

‘তাদের কাছে জনগণ প্রশ্ন করতে পারে যে, এত গুম, খুন করার জন্য দায়ি সরকারের পদত্যাগ কি তারা দাবি করেছেন? নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়কে যখন আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ও বিএনপিকে দুর্বল করার অসৎ উদ্দেশ্য বলছি, তখন সেই রায়ের ভিত্তিতে তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্ন আসে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ইচ্ছাকৃতভাবে কিম্বা ক্ষমতাবান কারও তুষ্টির জন্য তারেক রহমমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো থেকে দায়িত্বশীল মিডিয়া বিরত থাকবে।’

ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা’ বলে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয়েছে, তা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন। এই খবরে দেশের জনগণের মতো আমরাও বিস্মিত হয়েছি।’

এর আগে বুধবার (১০ অক্টোবর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়,  “১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে। পরাজিত শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে রোধ করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে।”

“২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন চেষ্টা চালানো হয়” বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলালম আলমগীর বলেন, ‘আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বক্তব্য হুবহু এক।’

‘লক্ষণীয় হলো-১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘৃণ্য অপরাধকে একসূত্রে গাঁথার যুক্তি সঠিক হলে বিএনপি কিম্বা বিএনপি পরিচালিত রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপরাধী বলা হোল কোন যুক্তিতে ? ১৯৭৫ সালে বিএনপির জন্মও হয়নি এবং ১৫ আগষ্ট কিংবা ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোনো আদালতই বিএনপি কিংবা বিএনপির কোনো নেতাকে অভিযুক্ত, এমনকি সম্পৃক্তও করেনি’- বলেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘২১ আগষ্টের ঘটনার বিচারের পর্যবেক্ষণে আগের ২টি ঘটনার উল্লেখ কতটা প্রাসঙ্গিক ? দল বিশেষের রাজনৈতিক বক্তব্যের সাথে আদালতের পর্যবেক্ষণ মিলে যাওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলেই জনগণ মনে করে।’

তিনি বলেন, ‘মুফতি হান্নান দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে যে জবানবন্দী দিয়েছিলেন তা তিনি প্রকাশ্য আদালতে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও তারই জবানবন্দীকে ভিত্তি করে তারেক রহমান এবং অন্যান্য বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেওয়াটা কতটা মানবিক ও যুক্তিযুক্ত কিংবা আইনসঙ্গত: হয়েছে, তা উচ্চ আদালত বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি।’

ফখরুল বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক মন্ত্রী এস এম এ কিবরিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ থাকলেও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, ছাত্রনেতা জাকিরসহ গুম হওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কোনো কথা নেই।’

তিনি বলেন, ‘রায়ের পর্যবেক্ষণে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে গত ১০ বছরে হাজারো গুম, খুন, গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করা, হাজার হাজার গায়েবি মামলা দিয়ে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর ঘরছাড়া করে রাখা, গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করার বিষয়টি না থাকায় রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।’

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে সংঘটিত ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার দায় যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের হয়, তাহলে বর্তমান সরকারের শাসনামলে পিলখানা বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, হলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড, জঙ্গি হামলায় নিহত বিদেশী কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইমাম-মোয়াজ্জিন, যাজক, পুরোহিত, ব্লগারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এমআই

তারেক ফখরুল বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর