Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমপির পিএসকে ডেকে হেনস্থার অভিযোগ ডিসি মোশতাকের বিরুদ্ধে


১২ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২৬

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য (রামপুরা-বাড্ডা) এ কে এম রহমতুল্লাহর ব্যক্তিগত সচিব এহসানুর রহমান সুমনকে ডেকে নিয়ে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে।

হেনস্থার বিষয়টি জানিয়ে ৯ অক্টোবর পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন এমপির ওই ব্যক্তিগত সচিব। হেনস্থার বিষয়টি তদন্ত করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের মনিটরিং সেল থেকে গ্রহণ করা সেই অভিযোগের একটি কপি (এস-৬৫৪) সারাবাংলার কাছে এসেছে।

অভিযোগে ভুক্তভোগী সুমন জানান, তিনি বাড্ডার বেরাইদ এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকার ১৫৯১ নম্বর দাগের ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শাহাদৎ হোসেনের সঙ্গে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা হলে নিম্ন আদালত শাহাদাত হোসেনের দলিল জাল বলে রায় দেন।

২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট নালিশী সম্পত্তিতে শাহাদাত হোসেনের কোন স্বত্ব নাই মর্মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিষয়টি মীমাংসা করতে হাইকোর্টের আদেশে ঢাকার দ্বিতীয় জজ আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যার মামলা নম্বর-৪১৮/১৪।

অভিযোগে বলা হয়, বাটোয়ারা মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকার পরেও গুলশানের ডিসি মোশতাক আহমেদ নালিশী সম্পত্তিতে শাহাদাত হোসেনের স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বাড্ডা থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের নির্দেশ দেন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ অক্টোবর ওসি রফিকুল ইসলাম বেরাইদে যান এবং নালিশী সম্পত্তিতে জোরপূর্বক দেয়াল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনার জের ধরে ডিসি মোশতাক আহমেদ বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফুল ইসলামকে দিয়ে তার অফিসে ডেকে নেন। সুমন সেখানে গিয়ে দেখেন প্রতিপক্ষ শাহাদাত হোসেনসহ চার-পাঁচজনকে দেখতে পান। পরে মোশতাক আহমেদ তার কক্ষে নিয়ে যান।

অভিযোগ বলা হয়, ডিসি মোশতাক বলেন, ‘আপনি ভূমিদস্যু, ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। শাহাদাত সাহেবের সঙ্গে আপনি কেন জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করছেন? উনি নালিশী সম্পত্তিতে বাউন্ডারি ওয়াল করবেন তাতে আপনার কী?’

আমি তাকে জানাই, এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। আদালতের রায়ে তিনি পেলে ওয়াল দিতে আমার কোনো আপত্তি নাই।

কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা আমলে না নিয়ে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।

সুমনের অভিযোগ, ডিসি উচ্চস্বরে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। নানাভাবে মানসিক হেনস্থা করেছেন।

শুক্রবার (১২ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এহসানুর রহমান সুমন জানতে চাইলে সারাবাংলাকে বলেন, আদালত ওই জমির বিষয়ে আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। শাহাদাত হোসেন জমির যে কাগজপত্র দিয়েছেন তা জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও শাহাদাতের পক্ষ নিয়ে ডিসি মোশতাক আমাদের হেনস্থা করছেন।

সুমন জানান আদালত বলেছে, দুজনের দলিলেই ১৯৪৭ সালে একই ব্যক্তির কাছ থেকে দুজন সম্পত্তি কেনা। যার দাগ নম্বর হলো ১৫৯১। সুমনের দাদা কিনেছে একই দাগের ৬২ শতাংশ জমি থেকে ৩০ শতাংশ। আর শাহাদাতের পরিবার একই দাগের ৯২ শতাংশ জমি থেকে ৩০ শতাংশ কিনেছে বলে দাবি তাদের। ১৫৯১ দাগে কোনোকালেও ৯২ শতাংশ জমি ছিল না। তাই আদালত শাহাদাতের দলিল নকল বলে রায় দেন।

সুমন বলেন, ‘আইজিপির কাছে অভিযোগ দিয়েছি মোশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আদালতের শরণাপন্ন হবো।’

আর অবিলম্বে জমিতে ওয়াল নির্মাণ বন্ধ রাখারও দাবি জানান তিনি। তা না হলে আদালতের যাবেন বলে জানিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, জমির সঠিক কাগজপত্র যার আছে সেই জমি তারই। তোমার কাগজপত্র থাকলে এই জমি তুমিই পাবে।’

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১২ অক্টোবর) শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার ফোন নম্বরে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

শুক্রবার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (সুমন) যে অভিযোগ করেছেন, তা সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদ পুলিশের দায়িত্বের পাশাপাশি একজন লেখকও। তিনি সায়েন্স ফিকশন নিয়ে এক নামে একাধিক বই লিখেছেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

এমপির পিএস জমি সংক্রান্ত বিরোধ ডিসি মোশতাক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর