জাতীয় ঐক্য থেকে বাদ বি. চৌধুরী-মাহী বি, ভাঙছে বিকল্পধারা
১৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:২৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্লাটফর্মে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে এ বৈঠক চলছে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বি. চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। এ কারণে তাদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিকল্পধারায়। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জেলার নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর ফলে বিকল্পধারায় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
বিকল্পধারার সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহ আলম বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বি চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরী মিলে যা করছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিকল্পধারা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমরা একমত আছি।’
তবে বিকল্পধারায় ভাঙন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাহী বি চৌধুরী।
সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিকল্পধারায় বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বি চৌধুরী ও মেজর মান্নান ছাড়া আর কারও নেতৃত্ব আছে নাকি? বিকল্পধারায় এই তিনজনই যথেষ্ট। দলে আর কী ভাঙন আসবে?’
শনিবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে শুরু হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ওই বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে বিক্ষাভ; নির্বাচন কমিশন ঘেরাও ও সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ; রাষ্ট্রপতি, নিবার্চন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার মতো বেশকিছু বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকজন নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার একাধিক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ একাধিক নেতা আন্দোলন প্রক্রিয়ায় বিকল্পধারা সভাপতি বি. চৌধুরী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বি. চৌধুরীকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় না রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন। যদিও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাখার বিষয়ে আগে থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল ড. কামাল ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে অতিথি ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ওইদিন তারা আন্দোলনে তারা একমঞ্চে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এরইমধ্যে বি. চৌধুরীর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব ও টানাপোড়েন তৈরি হওয়ায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন করবেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। ওই সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে জানানো হবে।
গণফোরামের গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক সারাবাংলাকে প্রেস ব্রিফিংয়ের তথ্য জানিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বৈঠক শুরু হলেও বিকেল ৫টায় এ বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায়। কথা ছিল বৈঠকের পরই ঘোষণা হবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।
কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেন এর চেম্বারে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বৈঠক করেন।
সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি কামাল হোসেনের চেম্বার থেকে বের হয়ে যান। এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কোনো কথা বলেননি। ড. কামাল হোসেনের চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনি পাশেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ-এর চেম্বারে যান। পরে আবার ৪টার দিকে ড. কামালের চেম্বারে প্রবেশ করেন।
ওই বৈঠকে পৌনে ৪টার দিকে যোগ দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইউজে/একে