বিশ্বে প্রতি ৪ জনের একজন থ্রোম্বোসিস জটিলতায় মারা যান
১৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩০
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: শরীরের রক্তনালীতে কোনো কারণে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তাকে থ্রোম্বোসিস বলে। বিশ্বে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন থ্রোম্বোসিস-এর জটিলতায় মারা যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমাদের দেশেও প্রতিদিনই কেউ না কেউ থ্রোম্বোসিস জনিত রোগ বা এর জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন এমনকি কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন অকালে। আর সেকারণেই এই রোগের প্রতিরোধ জরুরি এবং প্রতিরোধের প্রথম শর্ত হচ্ছে সচেনতা।
আজ শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ব থ্রোম্বোসিস দিবস। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব থ্রোম্বোসিস অ্যান্ড হিমোস্ট্যাসিস-এর উদ্যোগে প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর বিশ্ব থ্রোম্বোসিস দিবস পালন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে এবারই প্রথমবারের মতো ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ বিশ্বের ৯০টি দেশের সঙ্গে এক যোগে বিশ্ব থ্রোম্বোসিস দিবস পালন করছে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষের মধ্যে কোনো না কোনোভাবে ভাসকুলার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমরা বিষয়টি নিয়ে সচেতন নই। আর এই সচেতন না থাকার কারনেই প্রতি মুহূর্তে কারও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, কেউ সচেতন হচ্ছে, কারওবা আবার হাত কিংবা পায়ে পচন ধরে হাত-পা কেটেই ফেলতে হচ্ছে। তাই মানুষকে সচেতন করতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, হার্ট বা রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তাকে থ্রোম্বোসিস বলা হয়। সাধারণত হার্টবিট অনিয়মিত থাকলে, হার্টের ভাল্বে সমস্যা থাকলে, হার্টে কৃত্রিম ভালব লাগানো থাকলে কিংবা ব্লকজনিত কারণে হার্টের ওয়াল দূর্বল থাকলে হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং হার্টের মধ্যে রক্ত জমে গেলে নানা ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। আর তা ব্রেইনের দিকে গেলে স্ট্রোক করতে পারে। রক্তের দলা হাত বা পায়ের দিকেও যেতে পারে আর সে ক্ষেত্রে হাত বা পায়ে গেলে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে হাতে বা পায়ে তীব্র ব্যথা হবে। সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধে এ ব্যথা যায় না। ধীরে ধীরে হাত বা পা ঠান্ডা হয়ে যায় এবং নীলচে কালো হয়ে যায়। এমনকি হাত বা পা অনূভূতিহীন হয়ে অকেজো হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ অবস্থাকে ‘অ্যাকিউট লিম্ব ইসকেমিয়া’ বলে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় হাতে থাকে, এ সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার করে রক্তের দলা না সরালে অকালে হাত বা পা হারাতে হতে পারে। চিকিৎসকরা আরও বলেন, অনেকের ঘাড়ে অতিরিক্ত হাড় থাকে, এসব হাড় ঘাড়ের রক্তনালীতে চাপ দেয়। তখন রক্তনালী স্ফীত হয়ে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। জমাটবদ্ধ রক্ত হাতে গিয়ে হাত নষ্ট করতে পারে। পেটের বা বুকের মূল রক্তনালীও স্ফীত হয়ে যেতে পারে—একে অ্যানিউরিজম বলে। এ ক্ষেত্রেও রক্ত জমাট বেঁধে পা নষ্টের কারণ হতে পারে। অন্যদিকে যারা দীর্ঘ সময় আকাশপথে যাতায়াত করেন, বিপদ হতে পারে তাদেরও।
কারণ হিসেবে ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসক্যুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, উড়োজাহাজগুলোর ইকোনোমি ক্লাসে বেশিরভাগ যাত্রী যাতায়াত করেন। ইকোনোমি ক্লাসের সিটগুলো খুব কাছাকাছি থাকে, ফলে মানুষ নড়াচড়া করে কম। দীর্ঘসময় নাড়াচাড়া না করার কারণে যাত্রীদের গভীর শিরায় ব্লক হতে পারে। একে ‘ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস বা ডিভিটি’ বলে। এমনকি উন্নত বিশ্বে একে ‘ইকোনোমি ক্লাস সিন্ড্রোম’ বলেও ডাকা হয়।
এ ছাড়াও পায়ে প্লাস্টার লাগানো, বড় অপারেশন, প্রেগন্যান্ট মা, অনেক বেশি মুটিয়ে যাওয়া, দীর্ঘ সময় একভাবে শুয়ে থাকলে ডিভিটি হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা পেলে রোগী সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যেতে পারে বলেও জানান ডা. সাকলায়েন রাসেল।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ডিভিটি এর চিকিৎসা যত দেরিতে শুরু হবে সুস্থ হবার সম্ভাবনা তত কমে যাবে। কখনো কখনো ডিভিটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। পায়ের জমাটবদ্ধ রক্তের দলা ছুটলেই বিপদ জানান, ডা. সাকলায়েন। তিনি বলেন, ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ হয়ে মিনিটেই রোগী মারা যেতে পারে। একে পালমোনারী অ্যামবোলিজম বলে।
ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, আমাদের দেশে বিষয়টি এখন পরিচিতি পায়নি। যার কারণে বিষয়টি নিয়ে মানুষ এখনও সচেতন নয়। তাই এ নিয়ে সচেতনতা খুব জরুরি। একটু সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করলে এ থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই