ষষ্ঠীতে শুরু দুর্গা পূজা
১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পূজা।
সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ, বিকেল ৪টায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিনের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
এদিন সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত থাকবে সকল পূজা মণ্ডপ। আগামীকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, পরশু বুধবার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা, বৃহস্পতিবার মহানবমী বিহিত পূজা এবং শুক্রবার বিজয়া দশমী ও দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজা যজ্ঞ।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী জানান, সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে এবার মা দুর্গা ধরণীতে আসবেন ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে। আর বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। এবারের পূজার মূল বার্তা ছত্রভঙ্গ। মা দুর্গা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সবকিছু লণ্ডভন্ড করে দিয়ে দুনিয়ায় আসবেন। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে ছন্দপতন হিসেবে এ ছত্রভঙ্গকে বোঝানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এ পুরোহিত। এটা ঘোড়ায় চড়ে আসার ফল।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। উমা থেকে পার্বতী। পার্বতী থেকে দুর্গা। এই নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, তিনি গিরিরাজ হিমালয়ের কন্যা ও পর্বতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই তিনি পার্বতী। পরের অধ্যায়ে তিনি হয়ে ওঠেন দানব দলনী দশভুজা। আর তখনই তার নাম হয় দুর্গা। দুর্গা পূজার সঠিক সময় বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্যেও শরৎকালে দুর্গা পূজা প্রচলিত হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, রাজধানীতে এবার ২৩৪টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৯ টি মণ্ডপ রয়েছে বৃহত আকারের। সারাদেশে মণ্ডপের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।
এদিকে, রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
এর আগে রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা জানান, গত বছরের মতো এবারও সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। কোনো প্রকার নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলেও এ সময় সাংবাদিকদের জানান তিনি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি অঞ্জলি মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- শুভ্র শরতে দুর্গার পদধ্বনি
রাজধানীতে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম মণ্ডপ, রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, বাসাবো বালুর মাঠ, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-
পূজার প্রস্তুতি শেষ, প্রতিমা বরণের অপেক্ষা
দেবি আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, বরণের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কারিগর
সারাবাংলা/এমএস/এমআই