‘উড়াল সড়ক নয়, ২০০ ভিআইপিকে হেলিকপ্টারে আনা-নেওয়া করুন’
১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরীর যানজট নিরসনে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করছে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন।
মাত্র ২০০ জন ভিআইপি-সিআইপির বিমাবন্দরে যাতায়াতের জন্য ২৮০০ কোটি টাকায় উড়াল সড়ক না বানিয়ে তাদের হেলিকপ্টারে বিমানবন্দরে আনা-নেওয়ার কথা বলেছেন সংগঠনের সভাপতি।
সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি গত ১০ অক্টোবর ‘লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ সংক্রান্ত ব্যয় অনুমোদন করেছে। শহরের মূল অংশ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত সহজতর করতে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
এরপর সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দীর্ঘদিন ধরে নগর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে চলা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্তরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব স্থপতি জেরিনা হোসাইন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিডিএ চেয়ারম্যান (আবদুচ ছালাম) ঘোষণা দিয়েছেন লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবেন। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তি হিসেবে সিডিএ চেয়ারম্যান সিআইপি-ভিআইপিদের দ্রুত বিমানবন্দর যাত্রার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
জেরিনা হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে সড়কের যে সক্ষমতা আছে, অব্যবস্থাপনার জন্য সেটার শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে না। সঠিক বিকল্প বিবেচনা না করে মাত্র ২০০ জন শিল্পদ্যোক্তার বা সিআইপি-ভিআইপির জন্য ২৮০০ কোটি টাকার এক্সপ্রেসওয়ে কি সমর্থন করা যায়? এই সিআইপি-ভিআইপিরা মোট জনসংখ্যার কতজন? শূন্য দশমিক ০০৩৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যন অনুযায়ী দৈনিক বিমানযাত্রী ৩৪৭২ জন। সেটা বিবেচনা করলেও এই বিনিয়োগ যৌক্তিক নয়।’
‘সরকার সচেষ্ট হলে কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয় করে বিমানবন্দর যাত্রা গতিশীল করা সম্ভব।’ –যোগ করেন জেরিনা হোসাইন
নগর যাতায়াত নিয়ে কোন কৌশলগত পরিকল্পনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র কথা নেই বলে স্মরণ করিয়ে দেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
সিআইপি-ভিআইপিদের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে সংক্রান্ত সিডিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য সংবিধান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
সংগঠনের সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ‘২০০ জন ভিআইপি-সিআইপিকে যারা মাথায় তুলতে চায়, সেই সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়। আমার রাস্তায় আগে আমাকে নির্বিঘ্নে হাঁটার অধিকার দিন। ২০০ জন ভিআইপি-সিআইপিকে হেলিকপ্টারে করে বিমানবন্দরে আনা-নেওয়া করুন। উনারা প্রচণ্ড সম্পদশালী মানুষ। হেলিকপ্টারে করে আসা-যাওয়ার সামর্থ্য উনাদের আছে। কিন্তু কোনোভাবেই আমার মাথার ওপর পা ফেলে নয়।’
‘আমি রাস্তায় হাঁটতে পারব না আর আপনি ভিআইপি-সিআইপির জন্য ফ্লাইওভার বানাবেন, সেটা হবে না।’
হাজার-হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রজেক্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘যত মেগাপ্রকল্প নেওয়া হয়, কিছু গ্রুপ থাকে, যিনি সংস্থার প্রধান থাকেন তার গ্রুপ থাকে, তারা সেখানে ব্যবসা করতে পারেন, তারা টাকা আয় করেন। কিন্তু এই টাকা তো আমাদের সবার টাকা। জনগণের টাকা। আমাদের টাকা খরচ করে আমাদের রাস্তায় হাঁটার অধিকার কেড়ে নেবেন, এটা তো মেনে নেওয়া যাবে না।’
লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে না বানিয়ে বিকল্প ‘ডেডিকেটেড লেইন’ করার চিন্তা করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচল করে। ২২ শতাংশ চলাচল করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা অথবা রিকশায়। ৪৩ শতাংশ গণপরিবহনে। ২৫ শতাংশ মানুষ হেঁটেই পথ চলেন। বিদ্যমান ৭০ শতাংশ মানুষই কোন না কোনভাবে পথচারী।
ফ্লাইওভার-এক্সপ্রেসওয়ে পথচারীদের পথ চলাকে সংকুচিত করছে বলে মন্তব্য সংগঠনের নগর পরিকল্পনাবিদদের।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহসভাপতি সুভাষ বড়ুয়া, এম এ বাসেত ও বিধান বড়ুয়া এবং সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, শাহরিয়ার খালেদ ও তাসলিমা মুন ছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই