বেহাল সড়ক! দুর্ভোগে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা
১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৫৬
।। হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
মৌলভীবাজার: খানাখন্দে ভরা রাস্তা আর যানবাহনের অপ্রতুলতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর, মির্জাপুর ও বৌলাশির গ্রামের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষজন। সরেজমিনে দেখা যায়, ভূনবীর থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত প্রায় পনেরো কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী।
স্থানীয়দের অভিযোগ নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার করার ফলে অল্প সময়েই সড়কের পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। রাস্তার কারণে এ সড়কে যানবাহন কমে গেছে বলেও জানান স্থানীয়রা। সিএনজি চালক রহিম জানান, এমন রাস্তায় গাড়ি চালালে ক্ষতির শিকার হতে হয়। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে আমার গাড়ির এক্সেল ভেঙেছে দুইবার।
ভাঙাচোরা রাস্তা আর গাড়ি স্বল্পতার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, স্থানীয় ভূনবীর শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ঝলক কান্তি চক্রবর্তী সারাবাংলাকে জানান, কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে মৌলভীবাজার জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি)কামরুল হাসান, ব্যক্তিমালিকানাধীন দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন এই সড়কে চলাচলের জন্য। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সিএনজি গাড়ির চাহিদা বড়ে। তাই যাত্রী না পেয়ে ধীরে ধীরে সেই দুটি বাসও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজ একটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে প্রায় পনেরশ’র মতো শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে যদিও যানবাহন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে। এসব বিবেচনা করে শুধু মাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারের তরফ থেকে যদি নির্ধারিত একটি বাস সার্ভিস চালু করা যায় তাহলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও থাকবে শতভাগ।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ের ফলাফলও অত্যন্ত সন্তোষজনক! দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন অভিভাবক জানান, এলাকার লোকজন অধিক ভাড়া দিয়ে আধুনিক যান বাহনে চড়ে শহরে আসা-যাওয়া করতে পারলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এ দুই ইউনিয়নের হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। গাড়ি পাওয়া ও ভাড়ার জন্য অনেক গরিব ছাত্র-ছাত্রী প্রায়ই স্কুলে আসেনা। আর যারাই আসে তারা ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট গাড়ির উপরে চড়ে স্কুলে আসে এবং বাড়ি ফিরে।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ জানায়, আমাদের বিদ্যালয় ছুটি হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায় তাই দ্রুত বাড়ি ফিরতে আমরা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করি প্রতিদিন এভাবে আসা যাওয়া করি। কিছু ছাত্র গাড়ির পেছনের হ্যান্ডেল ও ছাদে বসে যেতে পারলেও ছাত্রীরা পড়ে বেশ বিপাকে। অনেক ক্ষেত্রে মাইলের পর মাইল তারা পায়ে হেঁটে আসা যাওয়া করে।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক তারিক হাসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে আমাদের জেলায় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী চা-শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার জন্য দুটি গাড়ি স্থায়ী বরাদ্দ দিয়েছেন। যদি এই এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণেও একটি বাস স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হতো তবে শিক্ষার্থীদের আর এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ীভাবে গাড়ি বরাদ্দের বিষয়টি শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সুপারিশ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আবেদন করুক আমি তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এসব অবহেলিত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তাদের জন্য একটি স্থায়ী গাড়ি বরাদ্দ দেন তাহলে নিঃসন্দেহে এ এলাকার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
রাস্তার উন্নয়ন প্রসঙ্গে মির্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু আবু সুফিয়ান চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে গন্ধর্বপুর থেকে সমশেরগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে এবং ওয়ার্ক অর্ডারও হয়ে গেছে খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এনএইচ