জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ২৯ অক্টোবর
১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১২:১১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে মামলার শুনানি শেষে ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।
রায় ঘোষণার দিন ঠিক করার আগে বিচারক বলেন, ‘গত আড়াই বছর ধরে এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার সময় দেওয়ার পরও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানিতে অংশ নেননি।’
বিচারক জানান, ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হলো। এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন। রায় ঘোষণার দিন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ল
আদালতে শুনানি শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় মেট্রো মেকার্সসহ অন্যান্য লোকের কাছ থেকে তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা নিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি যে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ শব্দটিও ব্যবহার করেননি।’
‘এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩২ জন সাক্ষী হয়েছেন। এ মামলায় গত আড়াই বছর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কোনো যুক্তিতর্ক প্রদর্শন করেন না। আদালত বারবার তাদের যুক্তিতর্ক উত্থাপন করার জন্য বলেছে। কিন্তু তারা একগুঁয়েমি দেখিয়ে আদালতের কথা অমান্য করে বারবার যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য সময় চেয়ে চলেছেন।’
কাজল আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলা ও আদালতের প্রতি অনাস্থা বিষয়ে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে গেলে হাইকোর্ট তাদের আবেদন খারিজ করে দেন। হাইকোর্টে আদেশ হওয়ার পরও তারা মামলাটিতে কালক্ষেপণের জন্য যুক্তিতর্ক শুনানির সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য আবেদন করলে আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের দিন ঠিক করেছেন।
আরও পড়ুন: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি মুলতবি
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আদালত শুরুর আগে পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে আলাপ করে বিচারক এজলাসে ওঠেন। বিচারক রায় ঘোষণার যে তারিখ নির্ধারণ করেছেন তা আইনানুগ হয়নি, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয়।
মামলার শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে বিচার কাজ চলবে, উচ্চ আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। সেই আদেশ আপনাকে (বিচারিক আদালতে) দাখিল করা হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের কপি এখনো হাতে পাইনি। রায়ের কপি হাতে পেলে আমরা আপিল বিভাগে যাব। এ জন্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য আমরা সময় আবেদন করি। কিন্তু আদালত আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে রায়ের দিন ঠিক করেছে।’
খালেদার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া অতীতে যেভাবে আদালতে উপস্থিত থাকতেন সেভাবে এখনও থাকতে চান। মামলার শুনানি শুনতে চান। কিন্তু তিনি অসুস্থ, আদালতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। আর আদালতে উপস্থিত হলে অসুস্থতার কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
শুনানিতে কাজল আরও বলেন, ‘আপনারা ঘুরে ঘুরে একই কথা বারবার বলেন। উচ্চ আদালতের আদেশ এসেছে, আপনারা (আসামি পক্ষের আইনজীবীরা) বলতে পারেন মামলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময় নিতে চান। কিন্তু তা না করে আপনারা যে বিষয়ে সময়ের আবেদন করছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মোট আসামি চারজন।
খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক।
এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।
সারাবাংলা/এআই/একে