Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ক্যাম্প মেতেছে দুর্গা পূজার আনন্দে


১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:২৩

।। ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার থেকে ।।

একদিকে হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। অন্যদিকে বেঁচে থাকার যুদ্ধ। এই দুইয়ের মধ্যে গত বছর দুর্গা পূজা উদযাপন করতে পারেননি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গারা।

কিন্তু এবারের দৃশ্য ভিন্ন। এবছর বেশ বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজা উদযাপন করছেন রোহিঙ্গারা। নির্যাতিত এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়ার পাশাপশি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা’র। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উখিয়ার কুতুপালং এ আশ্রয় নেয়া হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য দুর্গা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কুতুপালং সরকারি বন বিভাগের জমিতে অবস্থিত হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পূজা মন্ডপ থেকে শুরু করে পুরো হিন্দু ক্যাম্পটি সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। জেলা প্রশাসক, পূজা উদযাপন কমিটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পূর্জা উপলক্ষে দেয়া হচ্ছে চাল, নতুন জামাসহ নানা উপহার সামগ্রী। এছাড়া তারা যেন নিরাপদে নিজেদের মতো উৎসব পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে আইন শৃংখলা বাহিনী।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে ১০১ টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। এই হিন্দু পরিবারে ৪১৮ জন হিন্দু রোহিঙ্গা আলাদাভাবে অবস্থান করছে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এর সরকারি বন বিভাগের জমিতে। গত বছর এই রোহিঙ্গারা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারেনি জীবন বাচাঁনোর যুদ্ধে লিপ্ত থাকায়। এইবার বাংলাদেশ সরকার তাদের পূর্জা উদযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার তারা খুবই সন্তুষ্ট।

ক্যাম্পের বাসিন্দা বালা শর্মা জানান, এই দেশে এসে নিরাপদে পূর্জা উদযাপন করতে পেরে শুধু আমরা নই শিশুরা পর্যন্ত খুশি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি আমরা সবাই কৃতজ্ঞ।

আরেক রোহিঙ্গা নাগরিক রতন দাশ জানান, মিয়ানমারে নির্যাতনের কারনে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর পরই শুরু হয় দুর্গাপূজা। ওই বছর ছিল কোনভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা। আর এইবারে বাংলাদেশে মনের মত করে পূর্জা উদযাপন করতে পারছি। তাই এদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সুমন্ত রুদ্র জানান, ‘মিয়ানমার নিজ দেশ হলেও সেই দেশে ছিল মৃত্যুর ভয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ভয় নেই। এ দেশের সরকার আমাদের নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘন্টা পাহারা দিচ্ছে। এই দেশ দিয়েছে আমাদের নিরাপদ জীবন।’

উখিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী স্বপন শর্মা (রনি) জানান, নিজ দেশ মিয়ানমারে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গত বছর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা পূজার আমেজ কি তা বুঝাতে পারেনি। তারা ছিল আতংকের মধ্যে। কিন্তু এই বছর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহযোগিতা এবং কক্সবাজার জেলা ও উখিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথম বারের মত শারদীয় দূর্গা উৎসব পালিত হচ্ছে। এখানে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পূজা উদযাপনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে নতুন পোষাক। এছাড়া নিরাপত্তা সহ শৃংখলা রক্ষায় হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবসময় উপস্থিত রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

উখিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) একরামুল সিদ্দীক জানান, রোহিঙ্গাদের দূর্গাপূজা উৎযাপনের জন্য ১০ টন চাল দেওয়া ছাড়াও মন্ডপ সাজানোসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়েছে নতুন পোষাক। ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু রোহিঙ্গারা যেন ভালভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য মন্ডপসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই প্রথমবারের মত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক একটি পূজামন্ডপে নিয়মিত যে পরিমান ফোর্স দেওয়া থাকে তার অতিরিক্ত ১০ জন পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার জোরদার রাখা হয়েছে মোবাইল টিম।

সারাবাংলা/এসএমএন

কক্সবাজার দুর্গা পূজা রোহিঙ্গা ক্যাম্প হিন্দু রোহিঙ্গা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর