বিএনপি জোট ছাড়ল ন্যাপ-এনডিপি
১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৪৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়লো জেবেল রহমান গানি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ এবং খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা নেতৃত্বাধীন ন্যাশলান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর ইমানুয়েলন্স ব্যাঙ্কুয়েট হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার এই ঘোষণা দেন জেবেল রহমান গানি ও খন্দকার গোলাম মর্ত্তোজা।
এ দু’টি দল ২০১২ সাল থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল। বিএনপি জোটের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে তারা। ন্যাপ-এনডিপির অভিযোগ, জোটের জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করলেও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জেবেল রহমান গানি বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সম্প্রাসারণ করে ১৮ দলীয় জোট যখন হয়, তখন থেকেই বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এই জোটের অংশিদার। পরে এই জোটই ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো অবদা রাখায় সচেষ্ট ছিলাম। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য ও মতবিরোধ থাকলেও জোটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময় ছিলাম আন্তরিক।’
‘২০১৪ সালের নির্বাচনে নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব থাকলে জোটের নিবন্ধিত দলগুলোর কেউ ১৮ দলীয় জোট ত্যাগ করেনি। এই ত্যাগকে জোটের প্রধান শরিক বিএনপি কখনো মূল্যায়ন করেছে বলে আমাদের কাছে প্রতিয়মান হয়নি। বরং তাদের ভাবখানা এ রকম যে, ‘তারা যাবে কোথায়’? সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলার চেষ্টা করেছেন, তাদের ওপর যে ঝড়, তা কেবল ২০ দলীয় জোটের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। এই জোট না থাকলে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ত না’— বলেন জেবেল রহমান গানি।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের কারণে কেউ চাপে থাকুক, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, এই দলগুলো পাশে ছিল বলেই তাদের অনেক ব্যর্থতার কিছু দায়ভার জোট শরিকদের দিতে পারেন। না থাকলে তাও পারতেন না।’
গানি বলেন, ‘সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্য’র নামে জাতীয় ঐক্যফ্যন্ট’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে বিএনপি এবং তার নতুন মিত্ররা যে সব ঘটনার অবতারণা করেছে, তা সত্যিই হতাশাজনক।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্যফ্যন্ট নায়কদের আচরণ সমগ্র জাতির সঙ্গে আমাদেরকেও হতাশ করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতির সেঙ্গ এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব বা বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জাতি এ ধরনের আচরণ আশা করে না।’
জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষ্য করেছি, তাদের অনেকেই ১/১১ সরকার প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তারা অনেকেই মাইনাস টু ফর্মুলায় জড়িত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সে মামলার নায়ক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের উপদেষ্টা যখন বিএনপির পাশে থাকে তখন আমরা ব্যথিত হই।’
‘বাংলাদেশ ন্যাপ এবং এনডিপি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু মাত্র ক্ষমতার পালা বদলের নামে কোনো অশুভ শক্তির ক্ষমতা গ্রহণ আমরা প্রত্যাশা করি না।’
‘কিন্তু এসব বিষয়ে বিএনপি সব সময় তার শরিকদের অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব কাছাকাছি সময় অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতিয়মান হয়। সেই বিষয়েও বিএনপি তার শরিকদের কাছে জোটের পরিষ্কার অবস্থান ব্যাখা করে না। জোটের বৈঠকে শরিক দলের মনোনয়নের বিষয়টি সামনে আনলেও বিএনপি কৌশলে তা এড়িয়ে যায়’- বলেন জেবেল রহমান গানি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাপ এবং এনডিপি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করছে। আমরা নতুন করে পথ চলতে চাই, দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনডিপির মহাসচি মঞ্জুর হোসেন ঈসাসহ দুই দলের শীর্ষ নেতারা।
সারাবাংলা/এসএইচ/এটি