মিঠেখালীতে রুদ্রকে স্মরণ
১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৫১
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বাগেরহাট: প্রেম, দ্রোহ ও তারুণ্যের কবি অকালপ্রয়াত রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬২তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠেখালীতে কবির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে রুদ্র স্মৃতি সংসদ। অনুষ্ঠিত হয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সন্ধ্যায় রুদ্র স্মৃতি সংসদ কার্যালয়ে রয়েছে কবির স্মরণসভা।
আজ ১৬ অক্টোবর তারুণ্যের দৃপ্ত প্রতীক রুদ্রের ৬২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫৬ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন প্রেম, দ্রোহ, স্বপ্ন ও সংগ্রাম। নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে, হয়ে উঠেছিলেন তাদেরই কণ্ঠস্বর। শিল্পমগ্ন উচ্চারণে নিজেকে করেছেন অবিস্মরণীয়, তারুণ্যের প্রেরণা।
‘ভালো আছি ভালো থেকো/আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’; ‘আজও আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই/ আজও আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি’ কিংবা ‘রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে/ সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।/স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন’— এমন কালজয়ী সব পংক্তিতে প্রেম-দ্রোহে আজও সব মানুষের হৃদয়ের উচ্চারণে ফিরে ফিরে আসেন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া এই কবি।
‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’— এমন নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি তার অমোঘ উচ্চরণ ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। অসাম্য, শোষণ আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয়তা রুদ্রকে করে তুলেছে চিরকালীন। পাশাপাশি স্বপ্ন, প্রেম আর সৌন্দর্যমগ্নতায় রুদ্র যেন চিরতরুণ প্রেমের প্রতিবিম্ব।
১৯৭৯ সালে ‘উপদ্রুত উপকূল’ দিয়ে শুরু। এরপর মাত্র ৩৫ বছরের জীবনে রুদ্র রচনা করেন আরও ছয়টি কাব্যগ্রন্থ— ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭), ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) ও ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।
‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’— রুদ্রর লেখা ও সুরারোপিত এই গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননাও লাভ করেন।
‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দু’টির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ পান রুদ্র। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন রুদ্র।
১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।
সারাবাংলা/টিআর