এলএনজি আমদানি বাড়লে গ্যাসের দামও বাড়বে
১৬ অক্টোবর ২০১৮ ২২:০৭
।। স্পেশাল করেসপেন্ডন্ট ।।
ঢাকা: আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রবেশের কারণে যতটুকু খরচ বেড়েছে, তা শুল্ক-কর মওকুফ ও ভর্তুকির মাধ্যমে পুষিয়ে নেবে সরকার। তবে ভবিষ্যতে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়লে গ্যাসের দামও বাড়বে।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি’র সাংবাদিক সম্মেলনে এমন তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। রাজধানীর কাওরান বাজারে টিসিবি ভবনে বিইআরসির শুনানি কক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের দাম না বাড়ানোর নির্দেশ দেন বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন- গ্যাসের দাম বাড়েনি, ভর্তুকি ৩১০০ কোটি টাকা
সাংবাদিক সম্মেলনে কমিশন সদস্য আবদুল আজিজ খান জানান, সরকার এলএনজি আমদানির কারণে বেড়ে যাওয়া খরচের বিপরীতে অর্থ সংস্থানের দায়িত্ব নিয়েছে। এজন্য চলতি অর্থবছরে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রয়োজন। সেটি সরকার দেবে। তাই এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে না।
দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে এলএনজি ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পর থেকেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর আগে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৭৫ ভাগ দাম বাড়ানোর আবেদন নিয়ে কমিশনে আসে। কমিশন ওই আবেদনের শুনানির পর এলএনজি আমদানিতে আর্থিক সংকট দূর করতে গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেয়।
নানামুখী বিশ্লেষণের মধ্যে গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর অনুমোদনের জন্য যায় বিইআরসি। তবে বিইআরসি চেয়ারম্যার মনোয়ার ইসলামকে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ১৭ মার্চ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) কমিশনে সঞ্চালন ট্যারিফ বাড়ানোর আবেদন করে। এরপর ২০ মার্চ গ্যাস বিতরণ তিতাস, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও কর্ণফুলি এবং ২১ মার্চ জালালাবাদ ও সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পৃথকভাবে তাদের বিতরণ চার্জসহ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর আবেদন করে। কমিশন আবেদনগুলো বিবেচনা করে জুনে শুনানি করে। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিইআরসি রেগুলেটরি আইন ২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) এবং ৩৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যমান মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসে এলএনজি সরবরাহ বাড়বে আরও ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে করে সব মিলিয়ে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। আগামী বছরের প্রথমার্ধে সামিট গ্রুপের ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তখন গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা ২৬ সেপ্টেম্বরের এসআরও’র মাধ্যমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এলএনজি আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিভাগের জারি করা ৩ অক্টোবরের আলাদা দু’টি এসআরও’র মধ্যেমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ও অগ্রিম মূসক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান গ্যাসের মূল্যহার পুনঃনির্ধারন, বিবরণী সংশোধন করে কমিশন আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিইআরসি জানায়, নিরাপত্তা জামানতের পরিমাণ তিন মাসের পরিবর্তে দুই মাস ও ছয় মাসের পরিবর্তে চার মাসের বিলের সমপরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের আর নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে না। গ্যাসের বিলের কাগজে গ্যাসের মূল্যহার, ঘনমিটারে ঘণ্টা প্রতি ও মাসিক অনুমোদিত লোড, চালনা ধাঁচ (দৈনিক কর্মঘণ্টা এবং মাসিক কার্যদিবস), ডায়ভারসিটি ফ্যাক্টর ও সরবরাহ চাপ (পিএসআইজি) উল্লেখ থাকতে হবে।
এছাড়া, গ্যাস ব্যবহারকারী সরবরাহ মাসের পরবর্তী মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব মাসুল ছাড়াই বিল পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে আরও বলা হয়েছে, এই সময়সীমার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গ্রাহকের কাছে বিতরণকারী কোম্পানিকে বিল পৌঁছাতে হবে। ক্যাপ্টিভ পাওয়ার এবং শিল্প গ্রাহকের কো-জেনারেশন স্কিম অব্যাহতভাবে তিন মাস চালু থাকলে পরের তিন মাসের মধ্যে ওই গ্রাহকের তিন মাসের মোট বিলের (সারচার্জ বা বিলম্ব মাসুল ব্যতীত) ওপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ছাড় (রিবেট) প্রদান করা হবে।
এদিকে, কমিশন নিরাপত্তা জামানত, বিল পরিশোধ, বিল পৌঁছানো বিষয়ে আগের নিয়মের পরিবর্তন করেছে। বিতরণ সিস্টেম লস নিরূপণের প্রচলতি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া গ্যাস সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় আরও কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া ও মিজানুর রহমান।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর