হঠাৎ জোটে ভাঙন, চরম অস্বস্তিতে বিএনপি
১৬ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:২১
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ২০ দলীয় জোট থেকে দু’টি দল ‘হঠাৎ’ করে বেরিয়ে যাওয়ায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বহুমুখী সংকট মোকাবেলায় যখন নতুন মিত্রের সন্ধানে ব্যস্ত বিএনপি, ঠিক তখন পুরোনো দুই মিত্র সরে যাওয়ায় প্রচণ্ড স্নায়ুচাপ তৈরি হয়েছে দলটির ভেতরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপি নেতারা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেননি, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগ মুহূর্তে জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপ এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ঘোষণা দিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। ভোটের রাজনীতিতে এ দু’টি দলের গুরুত্ব কম হলেও জোটের রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব নেহায়েত কম নয়। বিশেষ করে সংখ্যাতাত্ত্বিক নামে গড়া ২০ দলীয় জোট থেকে দু’টি দল বেরিয়ে যাওয়ার জোটের ‘নাম’ নিয়ে তৈরি হলো নতুন সংকট।
আরও পড়ুন- বিএনপি জোট ছাড়ল ন্যাপ-এনডিপি
২০১২ সালের এপ্রিলে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আরও দু’টি দলের ভগ্নাংশ বিএনপি জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।
কিন্তু ২০১৫ সালের শেষের দিকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যানের প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নীলু, ন্যাপ (ভাসানী) চেয়ারম্যান প্রয়াত অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক, এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে বেরিয়ে গেলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিএনপি জোট। সেই সময় জোটের সংখ্যাতাত্বিক নাম ঠিক রাখতে ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে দিয়ে আরেকটি এনপিপি, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামকে দিয়ে আরেকটি ন্যাপ ভাসানী গঠন করে বিএনপি।
এরপর ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জোটের তৃতীয় বৃহৎ শক্তি ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দল থেকে বেরিয়ে গেলে প্রচণ্ড ধাক্কা খায় বিএনপি। সেবার ও জোটের সংখ্যা তাত্ত্বিক নাম ঠিক রাখতে অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব ও মাওলানা আবদুল করিমের নেতৃত্ব আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এবং এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা নিজ নিজ দলের সবাইকে নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এবার আর বিকল্প দল তৈরি করে জোটের সংখ্যাতাত্ত্বিক নাম অক্ষুণ্ন রাখার সুযোগ পাচ্ছে না বিএনপি। ফলে জোটের নাম এখন ২০ দলীয় জোট হবে, নাকি ১৮ দলীয় জোট হবে— সে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে।
কেউ কেউ বলছেন, অস্বস্তির আরও একটা বড় কারণ হচ্ছে তথাকথিত বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নামে গঠন করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দীর্ঘ দৌড়ঝাঁপ ও নানা চড়াই-উৎড়াই শেষে ‘বড়’ মানুষদের হাতে গড়া ভোটবিহীন তিনটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সক্ষম হলেও দীর্ঘকালের পুরোনো মিত্র মশিউর রহমান জাদু মিয়ার নাতি জেবেল রহমান গানিকে নিজেদের জোটে রেখে দিতে পারেনি বিএনপি।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিএনপির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ বলার সুযোগ পাবে, নিজেদের লোকই যারা ধরে রাখতে পারে না, বাইরের লোক তাদের কাছে যাবে কীভাবে? এ ব্যাপারটিও বিএনপির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর। তবে তারা (ন্যাপ-এনডিপি) যাওয়ার সময় যে অভিযোগগুলো তুলেছে, তা ঠিক নয়। আমরা আশা করব, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং আবার জোটে ফিরে আসবে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর