দখলদারদের কবলে চুয়াডাঙ্গার সড়ক
১৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৩১
।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
চুয়াডাঙ্গা: চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক সম্প্রসারণ করা হলেও তার সুফল ভোগ করতে পারছেন না চুয়াডাঙ্গাবাসী। সড়ক বিভাগ ও পৌরসভার জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ব্যবসা। তাছাড়া সড়কের ওপরেই যত্রতত্র রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, গোটা চুয়াডাঙ্গা শহরের সড়কই যেন দখলদারদের কব্জা হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা শহর থেকে আসতে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের ডানপাশে পৌরসভার ড্রেন সীমানা পেরিয়ে সড়কের ধারে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর দোকান। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা এলজিইডি কার্যালয়ের ঠিক বিপরীত পাশেই সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন। এর পাশেই আবার কয়েকজন কসাই নিয়মিত জবাই করে আসছেন গরু-ছাগল। অথচ এর জন্য পৌরসভার কোনো অনুমতি তাদের নেই।
এদিকে, জেলা পরিষদের পাশেও সড়ক বিভাগের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের অন্য পাশের জমিও দখল হয়ে গেছে। পুরোনো কাস্টম কার্যালয়ের বিপরীতে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে মোটরসাইকেলের গ্যারেজ। প্রায় সারাদিনই মোটরসাইকেল ধোয়ামোছার পানি সেই গ্যারেজ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। তাতে সেখান দিয়ে চলাচলই দায় হয়ে পড়েছে।
শহরের আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি চায়ের দোকান। যাত্রীবাহী বেশ কয়েকটি বাসের কাউন্টারও বসানো হয়েছে সেখানে। আদালত এলাকা থেকে রেলস্টেশনমুখী সড়কে পুরোনো জেলা কারাগারের পশ্চিম পাশ আবার দখল করে চলছে ব্যবসা। সেখান থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কার্যালয়ের সামনের অংশ দখল করে ড্রেনের ওপর চা বিক্রি, হোটেল ও জুতা সারানোর কয়েকটি দোকান বসানো হয়েছে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে একটি সরকারি কার্যালয় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী একাধিকবার চিঠি দিয়েও সড়কের অবৈধ দখলদারদের সরাতে পারেনি।
একইভাবে কয়েকজন অবৈধ দোকান ঘর তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের প্রাচীরের কোল ঘেঁষে। টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের প্রাচীর ও তার বিপরীত পাশে ছোট ছোট চায়ের দোকান তৈরি করেছে কয়েকজন দখলদার। রেল স্টেশনের কাছে সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে মাছ বিক্রির আড়ত। এ আড়তের দুর্গন্ধে আশপাশের জনবসতি অস্বস্তি থাকায় এ নিয়ে আপত্তি জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
দখল থেমে নেই স্টেশন এলাকাতেও। আলুকদিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গামুখী সড়কের দু’ধার দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা করে যাচ্ছে কয়েকজন দখলদার। শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ে প্রতিদিন সড়কের ওপরে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজের পশ্চিম দিকে দখল করেছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা। চুয়াডাঙ্গা শহরের পৌরসভার উন্মুক্ত মঞ্চের কোল ঘেঁষে ব্যবসার পসরা সাজিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে কয়েকজন দখলদার। সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সামনেও দখল করে ব্যবসা চলছে।
পৌরসভার বাস টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও শহরের বড়বাজারের কাউন্টার থেকে চুয়াডাঙ্গা থেকে দিনরাত ঢাকাগামী পরিবহন ছেড়ে যাচ্ছে। ওই পরিবহনগুলো সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে সড়কে চলাচলকারীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বড়বাজারের খাবারের হোটেলগুলো সড়ক দখল করে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান ডাকঘরের সামনের অংশ দখল করে চা ও ফুলের দোকান করেছে দখলদাররা। রেলক্রসিং পেরিয়ে ডিঙ্গেদহের দিকে যেতে চেম্বার অ্যান্ড কমার্স কার্যালয়ের সামনের গ্যারেজে ট্রাক মেরামত করা হয় সড়কের ওপর ট্রাক দাঁড় করিয়ে।
এদিকে, চায়ের দোকান ও মোটরযানের টায়ার টিউব সারানোর অবৈধ দোকানের কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়রে প্রধান ফটক চোখেই পড়ে না। এছাড়া সরোজগঞ্জ বাজরের দু’ধারে স’মিলের কাঠ সড়কের পাশে ফেলে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাজারের পাশে দখল থেমে নেই। হিজলগাড়ী বাজারের কাছে স’মিলের কাঠ ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে। তাছাড়া ডুগডুগী পশু হাটের কাছে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের কাছে সড়কের দু’ধারে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শুকনো কাঠ বিক্রির আড়ত।
স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, গোটা শহরেই সড়কজুড়ে দখলদারদের এমন দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের চলাচল করাও অনেক সময় দায় হয়ে পড়ে। আবার এসব দোকানপাট ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে।
এভাবে সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিতেই নেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। কিন্তু দিনের পর দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে যাচ্ছে তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশনের নির্বাহী প্রকৌশলী সুবক্ত গীণ বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গেলে আমাদের চাহিদামতো কাগজপত্র তারা জমা দিতে পারবে না। শহরের বড়বাজারসহ বহু জায়গায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অনেকে পথে বসে ব্যবসা করছে। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অবহিতকরণ চিঠি দেবো। সড়ক ও জনপথ, পৌরসভাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া অবৈধ স্থাপনা সরানো সম্ভব না।’ তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
চুয়াডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম হাবিবুর রহমান অবৈধ স্থাপনায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে বলেন, অনেকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য আমাদের চাহিদামতো কাগজপত্র জমা দেয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সঠিক কিনা, তা দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে কারণেই অবৈধ স্থাপনায় আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়ে যায়।
গোটা চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গোটা জেলায় অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাছাড়া সড়ক ও জনপথের জমি মাপার কাজ অব্যাহত আছে। এগুলো হয়ে গেলে অবৈধ স্থাপনা সরানোর কাজ শুরু হবে।
সারাবাংলা/টিআর
চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সড়ক দখল