‘ড. কামাল ও মঈনুলরা গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি’
১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:২৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: সেনাশাসনের নামে এক/এগারোর সময় গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য মাইনাস-টু ফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছিল ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন। তারা আজকে মাঠে নেমেছে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এরা হচ্ছে পরীক্ষিত গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
বুধবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হবে উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট আজকে নতুন কিছু সঙ্গী-সাথী জোগাড় করে কথিত ঐক্যের নামে সেই পুরনো নিয়মে নির্বাচনের বিরুদ্ধে অশুভ চক্রান্ত শুরু করেছে। এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’
জাতীয় ঐক্যের দাবিগুলো অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যারা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে বারবার চক্রান্ত করেছে, সেই মুখচেনা মহল, মুখ চেনা কিছু ব্যক্তিত্বকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট একটি অভিলাষ নিয়ে নতুন করে মাঠে নেমেছে।’
ওয়ান ইলেভেনের সময় ড. কামাল হোসেনের নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘একজন সংবিধান প্রণেতা যিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। যিনি নীতি আদর্শের কথা বলেন, সেই ড. কামাল হোসেন ওয়ান ইলেভেনের সময় কী বলেছিলেন? সবার মনে আছে।’
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর বেঈমান খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ডেমোক্রেটিক লীগ করেছিলেন এই মঈনুল হোসেন। যিনি এক/এগারোর সময় সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিল। তিনি অসাংবিধানিক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে ওই সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো এবং নাইকো মামলা দিয়েছিলেন। এই এক ব্যক্তির পরামর্শেই সব মামলা হয়েছিল।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, বিচিত্র সেলুকাস। এই ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এখন বিএনপি-জামায়াতের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য মাঠে নেমেছিল তথাকথিত সেনাশাসনের নামে মাইনাস-টু ফর্মুলা নিয়ে এই ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন। তারা আজকে মাঠে নেমেছে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য। দেশে গণতন্ত্র উপহার দেওয়ার জন্য। এদের সবাই চেনে এবং জানে। এরা হচ্ছে পরীক্ষিত গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। এদের কথায় আর যাই হোক দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হবে না। মানুষ কোনোদিন ঐক্যবদ্ধ হবে না।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দলছুট আদর্শবিহীন কিছু ব্যক্তির সমাবেশ ঘটেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন যদি কেউ করতে চায়, নির্বাচনের মাঠে আসতে চায়, জোট করে আসুন, মহাজোট করে আসেন কোনো সমস্যা নাই। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কারণ আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই।’
কিন্তু তার মানে এই নয় নির্বাচনের নামে অসাংবিধানিক দাবি উত্থাপন করে মাঠের পানি ঘোলা করতে চাচ্ছেন তাদেরকে দেশের জনগণ প্রতিহত করবে বলেও আশাবাদ করেন।
গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি একজন নামধারী বুদ্ধিজীবী। আমরা শুনেছি, যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজনের সঙ্গে তার আত্মীয়তা আছে। তিনি কয়েকদিন আগে সেনাপ্রধান সম্পর্কে অসত্য জঘন্য মিথ্যাচার করেছে।’
এ বিষয়ে ১৪ দলের পক্ষে নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এ ব্যক্তিটি সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এখন যে চক্রান্তগুলো হচ্ছে, এর মধ্যে একটি নতুন উপসর্গ তৈরি করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।’
এছাড়াও ২৫ অক্টোবর যশোরে ১৪ দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি থাকার কারণে বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৯ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে নাসিম বলেন, ‘ওরা ঘরের মধ্যেই আছে। ব্যর্থ হয়ে ঘরেই ফিরে যেতে হবে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে, কোনো অপশক্তির ক্ষমতা নাই এই নির্বাচন ঠেকাতে পারে।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট-মহাজোট গঠন হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল যখন ঘোষণা হয়ে যাবে। তার আগে বা পরে আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন মহাজোট আবার হবে কি না? নেত্রীর নেতৃত্ব যারা মানে তাদের নেতৃত্বে আমরা এবারও নির্বাচন করব।’
‘১৪ দলীয় জোট তো আছেই। আমরা একসঙ্গেই আছি। এটা বাড়ানো বা কমানোর সম্ভাবনা নাই। বাড়ানোর ব্যাপারটা হয়ত নির্বাচনের সময় চিন্তা করতে পারি। তবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী শেখ হাসিনা।’
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালকুদারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা সাংবিধানিক পদ বহন করে, তাদের অবশ্যই যে কোনো বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। তিনি শপথ নিয়ে সাংবিধানিক পদ হোল্ড করে এই ধরনের কথাবার্তা প্রকাশ্যে বলছেন কেন? যদি কোনো আলোচনায় কিছু হয়েও থাকে তার মানে এই নয় প্রকাশ্যে আপনি বলবেন? তিনি এটা অন্যায় ও অযৌক্তিক কাজ করছেন। এই ধরনের পদে থেকে এই ধরনের আচরণ করা তার উচিত নয়। অন্যত্রায় তার পদটা ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
জাতীয় পার্টি (জেপি)’র মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদারসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে