নবমীতে বিচ্ছেদের সুর মন্দিরে মন্দিরে
১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:১৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : মহা অষ্টমীতে যে প্রাঙ্গণে পুজারীদের আনাগোনা ছিল আনন্দ-উৎসবের। নবমীতে এসে তাতে ভর করেছে বিষাদ। দুর্গতি নাশিনী মা দুর্গার বিদায় ঘনিয়ে আসায় ভক্তদের মধ্যে বিচ্ছেদ-বেদনার সুর বেজে উঠেছে। নগরীর পূজা মণ্ডপগুলোয় সনাতন ধর্মবলম্বীদের পদচারণ বাড়লেও বেলা শেষের গান তাদের মুখে।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) দিনের প্রথম ভাগে মা’কে বিদায় জানাতে হবে এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে ভক্তি আর শ্রদ্ধায় আরতি, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে চলছে মহা নবমী।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী জানান, বৃহস্পতিবার মহা নবমীতে সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীর বিহিত পূজা, সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দশমীর বিহিত পূজা ও দর্পণ নিরঞ্জন। সকাল থেকেই প্রসাদ বিতরণ শুরু হয়। সেইসঙ্গে সন্ধ্যায় ভোগ আরতি।
এদিকে দিনভর পুজা অর্চনা শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে নানা বয়সীদের আরতি প্রতিযোগিতারও আয়োজন থাকছে বলে জানা গেছে। নিমতলী মন্দির কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু নারায়ন চন্দ্র দাস জানান, সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত তাদের মন্দিরে আরতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জন। তবে তার আগে এদিন সকালে নারীদের আকর্ষণীয় সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হবে, বিসর্জনের আগে দুপুরের দিকে শোভাযাত্রা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হবে। এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মের পরম কাঙিক্ষত শারোদোৎসব।
তার আগে বুধবার অষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ ছিল কুমারী পূজা। দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে কুমারী কন্যাকে মাতৃরূপে অঞ্জলি দেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা, যার নাম কুমারী পূজা। সাধারণত ১৬ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুদের মধ্য থেকে ‘দেবীত্বের লণ বিচার করে’। কুমারী নির্বাচন করেন পুরোহিতরা।
নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়- ‘দুর্গা মা-ই কি, জয়’ধ্বনিতে পূজা শুরু করে ঢোলের শব্দের সাথে থেমে থেমে কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খনাদ আর নানা বয়সের নারীদের উলুধ্বনির মধ্যদিয়ে মুখর হয়ে ওঠে প্রাঙ্গন।
ভক্তরা ‘দেবীর’চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রাণিকুলের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করেন। দেবীকে এক নজর দেখার জন্য ভক্তদের মণ্ডপে ভিড় করতে দেখা যায়। হাজারো ভক্ত জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন মাকে। ভক্ত আর দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে দেবীর সঙ্গে সেলফি আর ছবি তোলায় ব্যস্ত দেখা গেছে আগত সকলকে। দর্শনার্থী ও ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে চলছে বৃহস্পতিবারের পূজার দিন।
সনাতন হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে মর্ত্যে আসার জন্য মহালয়ার দিন যাত্রা শুরু করেন। আর বিজয়া দশমীতে সন্তানদের নিয়ে স্বর্গে ফিরে যান দেবী। এ বছর দেবী দুর্গা ঘোড়ায় মর্ত্যে এসেছিলেন, আর দোলায় করে ফিরে যাবেন।
শ্রীমদ্ভাগবত মতে ‘পূজা দুই প্রকার। নিত্য পূজা এবং নৈমিত্তিক পূজা। ভক্তরা প্রতিদিন যে পূজা করে থাকেন তাই নিত্য পূজা। একে বিসর্জন দেওয়া যায় না। কিন্তু নৈমিত্তিক পূজা যেহেতু নিদিৃষ্ট তিথিতে হয়ে থাকে তাই ওই তিথি শেষে তাকে বিসর্জন দেওয়া যায়। তবে সে বিসর্জন অবশ্যই যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম সহকারে দিতে হবে’।
এদিকে বুধবার মহা অষ্টমীতে রাজধানীর প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রচণ্ড ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। মণ্ডপ ঘিরে গড়ে ওঠা মেলা প্রাঙ্গণে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপস্থিতি ও কেনাকাটা চোখে পড়েছে। বিশেষ করে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, জয়কালী মন্দির, বনানী পূজা মণ্ডপ, মেরুল বাড্ডার নিমতলী পূজা মন্দির, আফতাবনগরের অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ এলাকায় পূজা দেখা এবং মেলায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা বয়সী মানুষকে। এসব এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার খবর পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/এমএস/এসএমএন