আদালতের আদেশ, তবু শবরীমালা মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না নারীরা
১৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:১৬
রোকেয়া সরণি ডেস্ক ।।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরেও কেরালার বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে নারীদের ঢুকতে দেয়নি কট্টরপন্থী হিন্দু ভক্তরা।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিধি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রায়ে আরও বলা হয়, উপাসনালয়ে সব মানুষের ঢোকার অধিকার থাকা উচিত। মন্দিরে প্রবেশের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে লিবি সিএস নামে এক সাংবাদিক ও মাধবী নামে অন্ধ্রের ৪০ বছররে এক নারী মন্দিরের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা হন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাদের ঘিরে ধরে হেনস্থা করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বুধবার থেকেই শবরীমালা মন্দিরের দরজা খুললেও শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ছিল বিক্ষোভকারীরা। বহু নারীও বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে ও যানবাহনগুলোতে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী আছে কিনা— তা তল্লাশি করে। আটকানো হয় নারী সাংবাদিকদেরও।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত ৮শ বছরের পুরোনো শবরীমালা মন্দিরে পৌঁছনোর রাস্তা ধরে প্রতিবছরই ট্রেক করে লাখ লাখ পুরুষ ভক্ত। এ ধর্মীয় রীতি পালনের আগে ভক্তরা ৪১ দিন উপবাসও করে। কিন্তু বহু বছর ধরেই মন্দিরটিতে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী, অর্থাৎ মাসিক হয় এমন কোনো নারীকে ঢুকতে দেওয়া হতো না। ২০১৬ সালে কয়েকজন ছাত্রীর বিক্ষোভের পথ ধরে ওই মন্দিরে নারীদেরও প্রবেশের অধিকার আদায়ের আন্দোলন গতি পায়। এরপর গত মাসের শেষের দিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একশ বছরের রীতি ভেঙে এই প্রথম মন্দিরটিতে প্রবেশাধিকার পান নারীরা। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন ধর্মীয় রীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া হাজারও ভক্ত এ নিয়মের কোনো পরিবর্তনের বিরোধিতা করে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা ৫টার সময় মন্দির খোলার কথা থাকলেও ভক্তরা সকালেই পাহাড়ের নিচে থেকে যাত্রা শুরু করেন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও বাসে করে এসে মন্দিরের নিচে জড়ো হন। তাদের মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।
কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ছেলে ও বাবা-মায়ের হাত ধরে সাংবাদিক লিবি ও আরেক ভক্ত মাধবী মন্দিরের দিকে এগিয়ে চলেন। কিন্তু মন্দির পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই ‘স্বামীয়ে শরণম আইয়াপ্পা’ স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তৈরি করে দুই মহিলা ভক্তকে ঘিরে ধরেন। ভিড়ের মাঝে তাদের সাথে টানা-হেঁচড়ার ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া পাথরে এক বৃদ্ধাসহ কয়েকজন আহতও হয়েছে। দায়িত্বরত পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে লিবি ও মাধবীকে উদ্ধার করলেও পরে তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের কর্তারা তাদের মন্দিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তারা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে ও বেশ কয়েকজনকে আটক করে। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা ইট ছোড়ে পুলিশের গাড়িতে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরাও হামলার মুখে পড়েন।
কেরলের বাম সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারের পাশে দাঁড়ায়নি। জাতীয় মহিলা কমিশন এ দিন সরকারকে চিঠি লিখে পরামর্শ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে সব বয়সের নারী যেন শবরীমালা মন্দিরে বিনা বাধায় ঢুকতে পারে, পুলিশ তার ব্যবস্থা করুক।
সারাবাংলা/আরএফ