বিনা ধান-১১: আশায় বুক বেঁধেছেন চরের কৃষক
২১ অক্টোবর ২০১৮ ১১:২৩
।। জাহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে পতিত জমিতে বন্যা সহনশীল বিনা ধান-১১ চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। বন্যায় অন্যান্য ধান নষ্ট হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে আছে বিনা ধান-১১। আর এই ধানকে কেন্দ্র করেই ক্ষতি কাটানোর আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকেরা।
জানা যায়, এই দুই উপজেলার বিভিন্ন চরের পতিত জমিতে প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক এ বছর বিনা ধান-১১ চাষ করেছেন। আর এটা সম্ভব করেছেন রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের চরসাজাই মন্ডলপাড়া গ্রামের এরশাদুল হক মাস্টার। তিনি গত মৌসুমে একাই পরীক্ষামূলকভাবে চরের এক একর পতিত জমিতে বিনা ধান-১১ চাষ করে ভালো ফলন পান।
পরে সেই ধানের বীজ চলতি মৌসুমে তিনি এই দুই উপজেলায় চরাঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করে ধান রোপণের নিয়মকানুন শিখিয়ে দেন। এবার প্রায় ২৫০ একর জমিতে চাষ হয়েছে এই ধান।
কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদুল হক জানান, গত মৌসুমে তিনি এই বিনা ধান-১১ চাষ করে সফলতা পান। তাই চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষকদের একত্রিত করে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন চরের জমিতে বন্যা সহনশীল এই ধান চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং বিনা টাকায় বীজ সরবরাহ করেন। এ জাতের ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ফলন বেশি হয়। বন্যার পানিতে ক্ষতি না হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা।
রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রণয় বিষণ দাস বলেন, ‘বন্যা শহনশীল বিনা ধান-১১ আবাদ করে এরশাদুল হক এই চরাঞ্চলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।’
কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান, এরশাদ একজন উন্নত ও নতুনত্ব চাষাবাদের প্রতিক। প্রতিদিন সূর্য উঠা থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কৃষকেরা তার বাড়িতে ভিড় জমায় পরামর্শ নেওয়ার জন্য।
রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে অন্যন্য জাতের ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বন্যা সহনশীল বিনা-১১ ধানের কোনো ক্ষতি হয় নাই। এই বন্যা সহনশীল ধান চাষ চরাঞ্চলের অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে চরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।’
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্ট্রিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (বিভাগীয় প্রধান উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘এরশাদুল হককে আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছি।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল আমিন জানান, এরশাদ রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার পাঁচ শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে বন্যা সহনশীল জাত বিনা ধান-১১ এর বীজ দিয়েছেন। আমি তার অনেক ফসলি জমি পরিদর্শন করেছি। আমি মনে করি এরশাদ শুধু একজন কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা নন তিনি একজন কৃষি গবেষকও।’
সারাবাংলা/এমও