আমির খসরুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
২১ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৫২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে উসকানির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা এই আদেশ দিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় ফাঁস হওয়া একটি অডিও কথোপকথনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতয়ালী থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় গত ২৭ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে ছয় সপ্তাহের জামিন পান। হাইকোর্ট শর্ত দিয়েছিল মেয়াদের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ সেটা খারিজ করে জামিন আদেশ বহাল রাখেন।
আমির খসরুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, ছয় সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষে গত ৭ অক্টোবর আমির খসরু চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। আদালত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২১ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ শুনানির আদেশ দিয়েছিলেন।
এছাড়া আন্দোলনের সময় ফাঁস হওয়া আমীর খসরুর কথোপকথনের অডিও রেকর্ড শুনানির সময় উপস্থাপনের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
রোববার শুনানির সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সঞ্জয় গুহ আদালতে রেকর্ড উপস্থাপন করেন।
সঞ্জয় গুহ সারাবাংলাকে জানান, আদালত প্রথমে তদন্তকারী কর্মকর্তার মোবাইলে রেকর্ডটি শোনেন। এরপর লাউড স্পিকারে সেটি শোনানো হয়।
তখন আমির খসরুর আইনজীবীরা দাবি করেন, কথোপকথনের কোথাও সরকার উৎখাত বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কোন উপাদান নেই।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী আদালতকে বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যে আমির খসরুর কথোকথন এবং নির্দেশনার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, শুনানি শেষ করে জজ সাহেব খাস কামরায় চলে যান। পরে স্টেনোগ্রাফার এসে জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টি জানান।
এদিকে আমির খসরুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ আসার পর এজলাস কক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হট্টগোলের মধ্যে তারা পুলিশের উপর চড়াও হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দুপুর সোয়া ১ টার দিকে কড়া পুলিশ প্রহরায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রিজন ভ্যানে করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানও ছিলেন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
মামলায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের চেষ্টার অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হয়। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের মধ্যে আমীর খসরুর মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কুমিল্লায় অবস্থানরত নওমী নামে এক ছাত্রদলের কর্মীর কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এতে আমীর খসরুর কন্ঠে বলতে শোনা যায়, তিনি ওই কর্মীকে বলছেন ঢাকায় এসে লোকজন নিয়ে নেমে পড়তে। ওইদিনই ঢাকার ধারমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়।
মামলায় জাকারিয়া দস্তগীর দাবি করেন, আমীর খসরুর উসকানির জেরে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে বির্শঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তার কথার জেরেই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ
আরও পড়ুন
দুদকে হাজির হতে একমাস সময় চেয়েছেন আমির খসরু
দুই মামলায় আমির খসরুর আগাম জামিন
বিএনপি নেতা আমির খসরুকে দুদকে তলব
‘আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় আমির খসরুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা’
সিটি নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে: আমির খসরু