সরকারি চাকরিতে নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে, সংসদে বিল
২১ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৩৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কোটা প্রথা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে আইনি ভিত্তি দিতে সংসদে উত্থাপিত হয়েছে ‘সরকারি চাকরি বিল, ২০১৮’। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে জনবল নিয়োগ হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। তবে সংবিধানের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সরকার ‘পদ সংরক্ষণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৩তম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে আজ রোববার (২১ অক্টোবর) বিলটি উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত আইনে সরকারকে সরকারি গেজেট আদেশের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের যেকোনো কর্ম বা কর্ম বিভাগ সৃজন, সংযুক্তকরণ, একীকরণ, বিলুপ্তিকরণসহ অন্য যেকোনোভাবে পুনর্গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জারি করা আদেশ দ্বারা নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীর কর্মের শর্তাবলীর তারতম্য বা রদ করা যাবে। এমনকি আদেশের মাধ্যমে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতাও দেওয়া যাবে। এছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিতদের নিয়োগ ও কর্ম সম্পর্কিত যেকোনো শর্ত নির্ধারণ করা যাবে। একইসঙ্গে চাকরির দায় ও এখতিয়ার নির্ধারণ ও পরিবর্তন করতে এবং জনস্বার্থে আইনানুগ যেকোনো কর্মে বা দায়িত্বে নিয়োজিত করা যাবে।
আইনে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, এই আইনের আওতাভুক্ত কোনো কর্ম বা কর্ম বিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(৩)-এর উদ্দেশ্য পূরণ করতে পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। পদোন্নতির ভিত্তি হবে সতত, মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি। সরকারি চাকরির শিক্ষানবিশকাল ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পর্কিত বিষয় ও শর্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এছাড়া আইনে কোনো বিদেশি নাগরিককে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত করা যাবে না— এমন বিধানও রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণকে কোনো অর্থেই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বলে গণ্য করা যাবে না।
প্রস্তাবিত আইনের ৩২ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের লঘু ও গুরুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। লঘু শাস্তির মধ্যে রয়েছে— তিরষ্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন স্থগিত, বেতন স্কেলের নিম্ন ধাপে অবনতি এবং সরকারি আদেশ অমান্য বা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়। গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে— নিম্ন পদ বা নিম্ন বেতন স্কেলের অবনতিকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, অপসারণ ও চাকরি থেকে বরাখাস্ত।
প্রস্তাবিত আইনের ৩২ অনুচ্ছেদের ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে ৩৩ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দায়ী কর্মচারির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে হবে। ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে তার বেতন, ভাতা বা প্রাপ্য অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা থেকে সেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। এভাবে আদায় করা সম্ভব না হলে তা পাবলিক ডিমান্ড অ্যাক্ট ১৯১৩-এর অধীন সরকারি পাওনা হিসেবে আদায়যোগ্য হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে কোনো আপিল গৃহীত হবে না বলেও বিধান রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবত আইনে সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের দায়ে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কতৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিৃতিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৩৬ অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির কর্মের শর্তাবলীর তারতম্য ও রদ করার বিধান, ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের বিধান এবং ২১ অনুচ্ছেদে সবসময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য। নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রণীত ভিন্ন ভিন্ন আইন, প্রয়োজন অনুযায়ী ১৩৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত বিধি ও সরকারি অনুশাসন দ্বারা সরকারি কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকরি সংক্রান্ত একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন থেকে অনুভূত হওয়ায় ‘সরকারি চাকরি আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইনটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
২৩তম সংসদ অধিবেশন জাতীয় সংসদ সরকারি চাকরি বিল ২০১৮ সংসদ অধিবেশন