৩ চিকিৎসকে চলছে হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেই অ্যাম্বুলেন্স
২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৩০
।। সোহেল রানা, লোকাল করেসপন্ডেন্ট ।।
হিলি: হিলি-হাকিমপুর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু ১৩ জন চিকিৎসকের পদ থাকা এই হাসপাতাল চলছে মাত্র তিন জন চিকিৎসক দিয়ে। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অন্যদিকে এই হাসপাতালের একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ায় চিকিৎসা নিতে আসতেও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে মানুষকে।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিলি-হাকিমপুর উপজেলা। সীমান্তবর্তী ও গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর হওয়ায় এখানকার মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। তবে শয্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে হাসপাতালের যে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটির কোনো কার্যক্রেই এখনও চালুই হয়নি।
স্থানীয় অধিবাসী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র তিন জন। এই সামান্যসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কোনোভাবেই হাসপাতালে আসা সব মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিদিনই অনেক রোগীকে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হয় হাসপাতাল থেকে।
এদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্সও বিকল পড়ে আছে। বিআরটি এই অ্যাম্বুলেন্সটিকে অকেজো ঘোষণা করলেও এর বিকল্প কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। ফলে রোগী আনা-নেওয়ার জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে স্বজনদের। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ বাবা, আমার তো আর টাকা-পয়সা নাই যে ভালো জায়গায় চিকিৎসা করমু। মুই এনা হিলি হাসপাতালে আনু। তো শুননু নাকি এটায়ও ডাক্তার নেই। তাহলে হারা কোটে জামো বা।’
চেচঁড়া গ্রামের মাসুদ বলেন, মামীকে এখানে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছি। এসে শুনি ডাক্তার নেই, অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও নাকি নেই। এখন বাইরে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এর জন্য হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে ফোন করে জানতে পারলাম, অ্যাম্বুলেন্সও নষ্ট। এখন বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করলাম। সেই গাড়িতে আবার পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। এখন রাস্তায় কিছু একটা হয়ে গেলে তার দায় কে নেবে?
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মো. রায়হান হাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা আমাকেই ফোন দেয়। কিন্তু আমি কী করতে পারি? অ্যাম্বুলেন্স তো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বসে থেকে রোগীদের ভোগান্তি দেখতে তো আমারও ভালো লাগে না। আমি যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আহসান আলী সরকার বলেন, মাত্র তিন জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এই অল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানও (শুক্রবার এই প্রতিবেদন করার পরদিনই বদলি হয়েছেন) সারাবাংলার কাছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল চালাতে ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র তিন জন। এত অল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে তো সেবা দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে একাধিকবার বলেও নতুন চিকিৎসক নিয়োগ পাওয়া যায়নি।
অবশ্য এর মধ্যে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুতই অ্যাম্বুলেন্সের এই সমস্যার সমাধান হবে। চিকিৎসক সংকটসহ হাসপাতালের অন্যান্য সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস দেন তিনি।
সারাবাংলা/টিআর
অ্যাম্বুলেন্স উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা হাকিম উপজেলা