ডিবি অফিসে মইনুলের চোটপাট, চাইলেন সোনারগাঁও হোটেলের খাবার
২৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: মানহানি মামলায় আটকের পর ডিবি হেফাজতে সকালের নাস্তায় সোনারগাঁও হোটেলের খাবার খেতে চান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) গ্রেফতার অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ডিবি হাজতে তিনিসহ ১৮ জন আসামি ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সকলের জন্য ডিবি ক্যান্টিনের ১৩ টাকার খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবারের মেন্যুতে ছিল পাঙ্গাস মাছের ঝোল, ভাত আর সবজি। ব্যারিস্টার মইনুল এসব খাবার দেখে ডিবি কর্মকর্তাকে ডেকে বলেন, ‘আমার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। আমি টাকা দেব। এসব খাবার আমি খেতে পারব না। প্রয়োজনে সোনারগাঁও হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসেন।’
জবাবে ওই ডিবি কর্মকর্তা বলেছেন, না স্যার, আইন অনুযায়ী সকল আসামি যে খাবার খাবেন আপনাকেও তাই দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি সকলের সঙ্গে ওই খাবার খান।
ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, সোমবার (২২ অক্টোবর) দুপুরের পর রংপুরে দায়ের হওয়া মামলার ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাওয়ার পরপর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য ডিবির অভিযান শুরু হয়। প্রথমে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন হাইকোর্টের যে বেঞ্চে জামিন নেন সেখানে যাওয়া হয়। তাকে না পেয়ে হাইকোর্টের বাইরে অপেক্ষা করে ডিবির ওই টিম।
আরও পড়ুন: জামিনযোগ্য মামলায় জামিন পেলেন না মইনুল
এরপর তার অবস্থান শনাক্ত করা হয় আসলে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। বিকেল ৫টার দিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তার গুলশানের বাসায় প্রবেশ করার অবস্থান শনাক্তের পরপরই সেখানে ডিবির পুলিশ টিম হানা দেয়। সেখানে না পেয়ে উত্তরার দিকে যায় তারা।
প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কোথায় অবস্থান করছেন। এরপরই জানা যায়, মইনুল হোসেন আ স ম আবদুর রবের উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডের বাসায় ঢুকেছেন। পরে সেখানে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রথমেই বাসায় নক করলে আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জানালার ওপাশ থেকে কথা বলেন। জানতে চান, আপনারা কারা? জবাবে ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, আমরা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয় থেকে এসেছি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আপনাদের বাসায় অবস্থান করছেন। তাকে বের করে দেন। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। আমরা তাকে নিতে এসেছি। এরপর তানিয়া রব বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, মামলা যেহেতু আছে, তাহলে তো আপনারা তাকে তো নিয়েই যাবেন। ওনি একটু ঘাবড়ে গেছেন। বয়স্ক মানুষ। প্রেসার বেড়ে গেছে। আপনারা নিচের তলায় বসেন, আমি ওনাকে নিয়ে আসছি।
আরও পড়ুন: জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে ব্যারিস্টার মইনুল
নিচ তলার রুমে ডিবি কর্মকর্তারা মিনিট ১৫ বসেন, এরপরও উনি না এলে তারা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যান। এরপর দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে তা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে যান। তখন ওই কক্ষে তারা আসম আবদুর রব, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ অনেকেই দেখতে পান।
আ স ম আবদুর রব চিৎকার করে ওঠেন। বলেন, ‘আমি আবদুর রব, আপনারা আমার বাসায় কেন প্রবেশ করেছেন? আপনারা কারা? এই মুহুর্তে বেরিয়ে যান এখান থেকে।’ তখন ডিবি কর্মকর্তারা নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে বলেন, ‘স্যার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন স্যারের বিরুদ্ধে মামলার ওয়ারেন্ট আছে। আমরা তাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এরপরেও আ স ম আবদুর রব চিৎকার করে বলেন, আমার বাসা থেকে আপনারা একজনকে ধরে নিয়ে যাবেন। এটা অন্যায়। কি প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে। ডিবি কর্মকর্তারা ওয়ারেন্টের কপি দেখালে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘এটি তো কোনো মামলা নয়। এই মামলায় তো গ্রেফতারি হয় না। আপনারা অন্যায়ভাবে আমাকে নিয়ে যেতে এসেছেন। এরপর তাকে দুই তলা থেকে নামায় নিয়ে আসার সময় মইনুল হোসেন বলেন, ‘ আমাকে নিয়েই যাবেন!’ তখন ডিবি কর্মকর্তার মাইক্রোতে করে উত্তরা থেকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, গাড়িতে মইনুল জিজ্ঞাসা করেন, আমাকে নিয়ে গিয়ে কী করবেন? ডিবিতে রাখবেন নাকি আদালতে পাঠাবেন? তখন ডিবি কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। মইনুল তখন খুশি হয়ে বলেন, তাহলে তো আমি জামিন পেয়ে যাব। আমাকে তো আটকাতে পারবেন না। তাহলে আপনাদের লাভ কী?
রাত ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের হাজতখানায় অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে রাখতে গেলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে এখানেই রাখবেন? আসামিদের সঙ্গে আমাকে থাকতে হবে? অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় না? থাকতে তো অনেক কষ্ট হবে মনে হচ্ছে।’ তখন ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, আপনাকে আইন অনুযায়ী এই হাজতখানাতেই অন্যান্য আসামিদের সঙ্গেই থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রিজন ভ্যানে আসামি ওঠানোর সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আবারও ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘সবার সঙ্গে আমাকেও এই প্রিজন ভ্যানেই নিয়ে যাবেন। অন্য গাড়ি ব্যবস্থা করা যায় না?’
তখন বলা হয়, না স্যার, আপনাকেও এদের সাথেই এই প্রিজন ভ্যানে করেই নেওয়া হবে। এরপর তাকে প্রিজন ভ্যানে করেই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন কি বলেছেন জানতে চাইলে ডিবির আরেক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, তার ভুল হয়েছে। তাকে আঘাত করে কথা বলতে চাননি। এজন্য তিনি অনুতপ্ত বলেও জানান। আরেক আইনজীবীকে দিয়ে মাসুদা ভাট্টিকে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন এমন কথা জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, আমি নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে মাসুদাকে লিগ্যাল নোটিস পাঠাইনি।
এর আগে কখনো জেলে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মইনুল ডিবি কর্মকর্তাদের বলেছেন জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। ওই সময় তিন মাস জেলে ছিলেন তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি একজন আইনের লোক হয়েও ডিবির কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা করেছেন। এরপরেও ডিবি কর্মকর্তারা কোনোরকম খারাপ আচরণ করেননি। শুধু আদালতের নির্দেশনা আমরা পালন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী আমরা ওনাকে যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে/জেডএফ