এখন সিলেটেও হবে যক্ষার সব পরীক্ষা
২৩ অক্টোবর ২০১৮ ২২:০৪
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
যক্ষার জন্য প্রনীত কৌশলগত পরিকল্পনা (২০১৮-২০২২) অনুসারে গুণগত ও মানসম্মত উপায়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচী। এর অংশ হিসেবে সিলেটের বক্ষব্যাধী হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি।
মার্কিন সহযোগি সংস্থা ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে গত ১৮ অক্টোবর রিজিওনাল টিবি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি, বায়োসেফটি লেভেল ৩ (বিএসএল-৩ ল্যাব) নামের পরীক্ষাগারটি হস্তান্তর করা হয়। সিলেটের বক্ষব্যাধী হাসপাতালটি বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন।
ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ল্যাবরেটরিটি পরিচালিত হবে। সংস্থাটির টিবি. কেয়ার টু এবং চ্যালেঞ্জ টিবি নামক দুটি প্রকল্প এই ল্যাবরেটরির পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং স্থাপনের কাজ করেছে।
পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জনশক্তি বিভাগ এবং সিলেট সিটি করপোরেশন। এ প্রক্রিয়ায় সহযোগী হিসেবে ছিল গ্লোবাল ফান্ডও।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নাম ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিটির উদ্বোধন করেন। এরপর নগরীর পূর্ব দরগা গেইটে অবস্থিত স্টার প্যাসিফিক হোটেলে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষাগারটির হস্তান্তর করা হয়।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল পরীক্ষাগারটি সম্পর্কে একটি টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধির কারণে যক্ষার সঠিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন বায়োসেফটি ৩ স্তরের এ ল্যাবরেটরিটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের দ্রুত ও মানসম্মত সেবা দেবে। অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক টেকনোলজি সম্পন্ন এ ল্যাবরেটরিটি ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার পরীক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। একটি শিপিং কন্টেইনারের ভিতরে নির্মিত এ পরীক্ষাগারটি সম্পুর্ণ নিরাপদ, নির্ভুল এবং সাশ্রয়ীভাবে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম।
পরীক্ষাগারটি সলিড কালচার ও ডিএসটি এর মাধ্যমে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নির্ণয় করার পাশাপাশি এটি জিন এক্সপার্ট প্রক্রিয়া এবং অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক যন্ত্রাংশের সহায়তায় রফাম্পিসিম প্রতিরোধকারী যক্ষ্মা দ্রুত সনাক্ত করবে। এটি জাতীয় ঔষধ প্রতিরোধকারী যক্ষ্মা বিষয়ক জরিপ, গবেষণা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার হিসেবেও কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিএসএল-৩ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য ইউএসএআইডি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া এটি সফলভাবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার জন্য এনটিপি, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সিলেট জেলার সিভিল সার্জনকে ধন্যবাদ দেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে অবদান রাখায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, ইউএসএআইডি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ইউএসএআইডি প্রতিনিধি ডা. আলিয়া আল মোহান্দেজ, এমবিডিসি ও লাইন ডাইরেক্টর টিবি-লেপ্রসি অ্যান্ড এএসপির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম পরিচালক, জাতিসংঘের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন, বিএমএ এর মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, আইআরডি’র চ্যালেঞ্জ টিবি প্রজেক্ট সহ ম্যানেজমেন্ট সাইন্সেস ফর হেলথ এর কান্ট্রি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা. অস্কার কর্ডনসহ বিভিন্ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ১৯৭১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে প্রায় একুশ কোটি ডলার দিয়েছে। ইউএসএআইডি বাংলাদেশে যে সকল কর্মসূচিতে সহায়তা করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে – গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রসার, খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুবিধাদির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার উন্নয়ন ও অভিযোজন এবং স্বল্প কার্বন উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো।
সারাবাংলা/এসএমএন