ডিজিটাল আইনের ‘বিতর্কিত’ ধারা বাতিলে বাংলাদেশ লেখক ঐক্যের বিবৃতি
২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:০৮
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিলসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ লেখক ঐক্যের ১৩ জন সদস্য। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ লেখক ঐক্যের সদস্যদের বিবৃতিতে উল্লেখিত দাবিগুলো হলো- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ও নিবর্তনমূলক ধারাগুলোকে (যেমন ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২, ৪৩) রদ করা, এই আইনের প্রত্যেকটি ধারাকে জামিনযোগ্য করা এবং শাস্তির মাত্রা কমিয়ে অন্যান্য আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করা, পরোয়ানা ছাড়া পুলিশের অবাধ গ্রেফতারের, তল্লাশি করার ও জব্দ করার ক্ষমতা না থাকা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই আইন লেখক সম্প্রদায়ের লেখালেখির অধিকারকে সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ করবে; চিন্তার উপর তাদের সবসময় সেন্সর আরোপ করে চলতে হবে; তাদের মনোজগতে এক ভীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। তাই বাংলাদেশের লেখক সমাজ এই আইন প্রত্যাখ্যান করছে।
আইনটি লেখক, গবেষক, সাংবাদিক সবার জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ৫৭ ধারার চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর ধারা এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমন, এর ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন, তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা ও ২৫ লাখ জরিমানা।’
আরও বলা হয়, এ আইনের অন্যতম মানবাধিকার বিরোধী দিক হলো, এর মোট ১৪টি ধারার ক্ষেত্রে যেকোনো কিছু আমলযোগ্য ও জামিন-অযোগ্য, এবং রকমভেদে শাস্তির মাত্রা অতি উচ্চ। এতগুলো ধারা জামিন-অযোগ্য রাখা এবং শাস্তির মাত্রা দেখে আমরা ধারণা করতে পারি এই আইনটি প্রবর্তন করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারী, লেখক ও সাংবাদিকদের নিবর্তন করার জন্য।
আইনের অপব্যবহার হতে পারে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলা হয়, এর ৪৩ ধারায় পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, জব্দ ও তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই দেশে ‘গুম’ ‘অপহরণ’-এর পাশাপাশি নানান রকম পুলিশী হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তাই, পুলিশকে দেওয়া এ ক্ষমতারও অপপ্রয়োগ ঘটবে বলে আমরা আশঙ্কাবোধ করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই আইন বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ ধারা এবং তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে সব ধরনের মানুষকে এই আইন বঞ্চিত করবে। কারণ, এর ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারো মানহানি প্রভৃতি বিষয়কে অপরাধক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ফলে এ আইন যেকোনো বিরুদ্ধ মতকে ‘মানহানি’ বা ‘ব্যক্তির ভাবমূর্তি’ বিনষ্টকারী বলে দমন করার ভিত তৈরি করছে। আবার ‘ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির’ অযুহাতে তথ্য না দেওয়ারও একটি ক্ষেত্র রচনা করেছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই আইনে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ শব্দটি বাদ দিয়ে বিতর্কিত অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ কে সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমাদের বোধগম্য নয়, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে দেশে যখন অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে চলেছে, তখন মান্ধাতা আমলের সেই নিবর্তনমূলক আইন সন্নিবেশ করার মাধ্যমে সরকার কী উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়? আমরা জানি নতুন ডিজিটাল বাস্তবতার উপযোগী আইন প্রণয়ন করা দরকার, কিন্তু সেই আইন হতে হবে ব্যবহারকারীদের জন্য সমর্থনমূলক, নিবর্তনমূলক নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লেখক সমাজ আগামীর বার্তা আগে শুনতে পায়। পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সামরিক শাসন বিরোধী সংগ্রাম এবং সর্বোপরি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের লেখক সমাজের ভূমিকা অতি উজ্জ্বল। তাই আমরা মনে করি এ বিষয়ে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমাদের দাবিগুলো বিবেচনা করে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশ লেখক ঐক্যর সদস্যরা হলেন, ইমতিয়ার শামীম, মঈনুদ্দিন খালেদ, জাকির তালুকদার, জি এইচ হাবীব, আহমাদ মোস্তফা কামাল, রাখাল রাখা, চঞ্চল আশরাফ, রায়হান রাইন, সামিনা লুৎফা, আলমগীর খান, আরশাদ সিদ্দিক, শওকত হোসন, ফাহমিদুল হক।
সারাবাংলা/এনএইচ