প্রথম সমাবেশেই বিশেষ বার্তা দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট
২৪ অক্টোবর ২০১৮ ১১:১৬
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
সিলেট থেকে : সিলেটের সমাবেশকে নির্বাচনী প্রচারণার মহড়া হিসেবে নিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। পাশাপাশি সমাবেশ থেকে সরকারকে বিশেষ বার্তাও দিতে চান তারা।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, খলেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি এবং নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার না করার দাবিতে আর কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ২ টায় সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র রক্ষায় জনমত গঠনের লক্ষ্যে তাদের এই সমাবেশ। এই সমাবেশ নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবেও নিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি সমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে বিশেষ বার্তাও পৌঁছে দিতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে কোনো প্রকার সুযোগ দিতে চাচ্ছে না। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আমাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। সুতরাং হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর শহর সিলেট সমাবেশটাকেই আমরা নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে নিচ্ছি। যদিও নির্বাচনের বিষয়টি এখনো সেটেল হয়নি।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে জনমত গঠনে সিলেট সমাবেশকে আমরা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে নিচ্ছি। এই সমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। সমাবেশ থেকে আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, সমাবেশের মূল লক্ষ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনমত গড়ে তোলা। আমরা সরকারকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, এদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। একতরফা নির্বাচন তারা মেনে নেবে না।
এদিকে সমাবেশে যোগ দিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে আকাশ ও সড়কপথে সিলেটে পৌঁছেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান উদ্যোক্তা ড. কামাল হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকাশপথে সিলেট পৌঁছান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বুধবার সকালে আকাশপথে সিলেট পৌঁছান।
তবে মানহানীর মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় সিলেট জনসভায় যেতে পারছেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
এদিকে বুধবার সকালে সিলেট পৌঁছেই হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সকাল সাড়ে ৬টায় শাহ জালালের মাজার জিয়ারত করেন। এর পর সকাল ৭টায় হযরত শাহ পরান(রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন তারা। এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া ও মোনাজাত করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন সিলেটে নেতারা। মঙ্গলবার বিকেলে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, সমাবেশের অনুমতি নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। মাত্র একদিন আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়নি।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ অভিযোগ করেন, দুপুরে মাইকিং করার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এরপর থেকে নগরীতে মাইকিং বন্ধ রয়েছে। তবে দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এবং সিনিয়র নেতারা নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছেন।
এদিকে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে সিলেটের রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগও। মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নবার্তা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি পালন করবে।
সারাবাংলা/এজেড/এসএমএন