ফেনীতে শিশু নির্যাতন, অভিনেত্রী শাহেনা আটক
২৪ অক্টোবর ২০১৮ ২০:৩৫
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
ফেনী: সারা শরীরে পুড়ে যাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে প্রিয়াংকা নামের ৬ বছরের এক শিশু ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ফেনী শহরতলীর শর্শদীর গজারিয়া কান্দি এলাকার শাহেনা বেগম নামের এক গৃহকর্তীর কাছে পালিত হিসেবে থাকত শিশুটি।
বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সারা শরীরে পুড়ে যাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে প্রিয়াংকা ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। পা থেকে মাথা, আঘাত এবং গায়ে পলিথিন জড়িয়ে দিয়ে আগুনে ঝলসানো থেকে বাদ পড়েনি এই শিশুটির শরীরের কোথাও।
পুলিশ জানায়, জোহরা বেগম নামের এক প্রতিবেশী নারী মঙ্গলবার বিকেলে প্রিয়াংকাকে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। ফেনীর শহরতলীর শর্শদী এলাকার পাঠান বাড়ি থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটিকে পাশের বাড়ি থেকে সেই নারী তার স্বামীকে সাথে নিয়ে শিশুটিকে মুমূর্মু অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় সেই বাড়িতে ছিল না কেউই। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, জানতে পারে যে, সেই বাড়ির গৃহকর্তী শাহেনা শিশুটিকে নিয়ে ঢাকায় থাকে এবং কয়েক মাস পরপর গ্রামের বাড়ি আসত। শিশু প্রিয়াংকা পুলিশকে জানায়,তার ওপর অমানসিক নির্যাতন করত আশ্রিত ‘মা’ শাহেনা বেগম।
প্রিয়াংকাকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনা বেগম। মঙ্গলবার রাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তিনি। পুলিশ তার ঘর থেকে বেশকিছু নির্যাতনের আলামত সংগ্রহ করেছে।
শাহেনা পুলিশকে জানায়, তার পালিত মেয়ে প্রিয়াঙ্কা আক্তারের ওপর জ্বিন ভর করেছে। যখন জ্বিন তার ওপর ভর করতো তখন শরীরে আগুনের ছ্যাকা দিলে জ্বিন চলে যেতো। আর সে কারণেই তিনি প্রিয়াঙ্কার শরীরে মোমবাতির আগুনের ছ্যাকা দিতেন। তবে স্থানীয়রা জানায়, জ্বিনের কথা বলে শাহেনী দীর্ঘদিন ধরে শিশুটির ওপর নির্যাতন করে আসছেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের অশ্লীল যুগের পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী ছিলেন শাহেনা বেগম। সর্বমোট ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে বিগত চার বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন এ অভিনেত্রী। কোন সন্তানাদি না থাকায় পিতা-মাতাহীন প্রিয়াঙ্কারে পালক সন্তান হিসেবে নেন তিনি।
শাহেনার ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তার সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। স্বামীর সঙ্গেও তার কোন যোগাযোগ নেই। দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাস করে আসছে সে।
প্রতিবেশী জোহরা আক্তার জানান, মঙ্গলবার বিকালে শাহেনীর বাড়িতে কান্নার শব্দ শুনে স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে যান। ক্ষত-বিক্ষত প্রিয়াঙ্কাকে তারা প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
প্রিয়াঙ্কার বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সোমবার রাতে শাহেনা লাঠি দিয়ে পেটানোর পর তার শরীর আগুনে ঝলসে দেয়। পরে তাকে ঘরে আটকে রেখে বেরিয়ে যায়। এভাবে প্রায়ই তার ওপর নির্যাতন করতো বলে জানায় শিশুটি।
শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, মেয়েটি ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনা বেগমের বাসায় থাকতো। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে শর্শদি ইউনিয়নের গজারিয়া কান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে আসতেন।
ফেনী সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ফয়জুল কবির বলেন, ‘শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হতে পারে।’
ফেনীর পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেনা নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। তাকে আরও তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এমএইচ