নির্বাচনী ৪ ইস্যুতে আ.লীগের সিদ্ধান্ত আসছে শুক্রবার
২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:০৫
।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের যৌথ সভা আহ্বান করা হয়েছে আগামীকাল শুক্রবার (২৬ অক্টোবর)। এইদিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখল রাখার কৌশল, ইশতেহার চূড়ান্ত করা, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে এই সভাতেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের (পার্লামেন্টারি পার্টি) সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে এই যৌথ সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে সারাবাংলা’কে বলেন, আগামী ২৬ অক্টোবর আমাদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে— জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার, একাদশ নির্বাচনে আমাদের ইশতেহার চূড়ান্ত করা, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি, নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’ তিনি বলেন, এদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক মাঠে ড. কামালের নেতৃত্ব বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল মিলে গঠিত জাতীয় এক্যফ্রন্টের কর্মসূচির ওপর নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী জোটকে চাপে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, শুরুতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের স্বাগত জানানো হলেও এখন তাদের রাজনৈতিক গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার (২৪ অক্টোবর) ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশ করেছে। দলের নেতারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই তৃণমূলে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। সিলেটের সমাবেশও সিলেটের জনগণের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এই সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ তাদের সাম্প্রদায়িক দোসররা রাজনৈতিক অঙ্গনে নাশকতা ও সহিংসতার ছক আঁকছে। সহিংসতার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন প্রতিহত করাই এই জোটের লক্ষ্য। নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠ দখল রাখার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি দলের উন্নয়ন প্রচার শুরু করেছে দলটি। তফসিল ঘোষণার পর বিভাগীয় শহরগুলোতে নির্বাচনী সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে শুক্রবারের যৌথ সভায়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আলাদা। কারণ, এবার ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির যৌথ নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে মোকাবিলা করতে হবে। তবে এ উদ্যোগ রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার পিছুটান এবং আরেক নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সাম্প্রতিক ভূমিকা ঐক্যকে অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘দেশের ভোট দু’রকম, আওয়ামী লীগ আর অ্যান্টি আওয়ামী লীগ’
নেতারা জানান, যৌথ সভায় দলের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করে একটি ইশতেহার উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর এই উপকমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইশতেহার উপকমিটিতে থাকা এক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার এবং সদ্য ঘোষিত সরকারের ডেল্টা প্ল্যান পর্যালোচনা করে তৈরি করা হচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার।
ইশতেহার বিষয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলা’কে বলেন, আমরা ইশতেহারের খসড়া তৈরি করেছি। দলের যৌথ সভায় এটি উত্থাপন করা হবে। তারপর সেখানেই চূড়ান্ত করা হবে।
ইশতেহারে কী কী থাকছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রাজ্জাক বলেন, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার, বিনিয়োগ, সুশাসন, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত সমাজগড়ার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে আগামী সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।
এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো বিষয়েও আলোচনা হবে যৌথ সভায়। এর আগে, একাধিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে। তবে গত সোমবার (২২ অক্টোবর) সৌদি আরব সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার আকার ছোট না করার ইঙ্গিত দেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক এক অনুষ্ঠানে জানান, মন্ত্রিসভা ছোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং নতুন দুয়েকজন যোগও হতে পারে। এ বিষয়টিও দলের যৌথ সভায় চূড়ান্ত করা হবে বলে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটি প্রার্থী মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অন্তত ১৯৯টি সংসদীয় আসনে প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে। গত ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলটির নির্বাচন পরিচালনা জাতীয় কমিটির বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। আগামী যৌথ সভায় এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত হওয়া তালিকা অনুযায়ী সারাদেশের ৭৩টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদলে যাচ্ছে। প্রায় ৪২টি জেলার এই ৭৩ আসনে এবার দেখা যাবে নতুন মুখ। যদিও শেষ মুহূর্তে অনেক আসনে দলীয় প্রার্থিতা অনেকাংশে নির্ভর করবে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর মনোনয়নের ওপর। এছাড়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান সংসদীয় কমিটিতে থাকা অনেকের নাম আছে মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকায়। মন্ত্রিসভার জনপ্রিয় ও প্রভাবশালীরাও স্থান পেয়েছেন চূড়ান্ত তালিকায়। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কের কারণে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অনেকেরই এবার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, যৌথ সভায় একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব বিষয়ে আলোচনা হবে। মনোনয়ন নিয়েও আলোচনা হবে।
হানিফ জানান, আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের প্রার্থী তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত। তবে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন— তা জানা যাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর