স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির যান, পৃথিবী কি তৈরি?
২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:৪৮
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
সারাবিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এক স্বয়ংক্রিয় ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে মানুষের কাজ শুধু চিন্তা করা। মানুষ নিজের মতো সময় কাটাবে, তাকে জীবনযাপন সহজ করতে পরিশ্রম করতে হবে না, পাশাপাশি জীবন হবে নিরাপদ— এরকম ভাবনা থেকেই আসে স্বয়ংক্রিয় যানের ধারণাটা। যদিও স্বয়ংক্রিয় যানের উদ্ভাবকরা দাবি করেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করে তারা ধারণা করতে পারেন, শতকরা ৯৪ ভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল চালক। ফলে তারা এমন যান তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা মানুষের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করবে।
স্বয়ংক্রিয় যানের গবেষণা ও পরীক্ষামূলক চালনা চলছিল বেশ। ফোর্ড, জেনারেল মোটরস, টেসলা ও ওয়াইমোর মতো কোম্পানিগুলো স্বচালিত গাড়ির গবেষণায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এমনকি অনলাইন জায়ান্ট গুগলও এই গাড়ি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। বলা হয়, স্বচালিত এ গাড়িগুলো মোটর শিল্পের ভবিষ্যৎ।
অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো শুরু থেকেই দাবি করে আসছিল, এসব গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা কমিয়ে আনবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কিন্তু এই সব গবেষণায় ভাটা নামে যখন এ বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাতে একটি স্বচালিত উবার এক পথচারীকে ধাক্কা দিলে তিনি নিহত হন। প্রশ্ন ওঠে, এই যানগুলো কি আদৌও মানুষের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম, নাকি তাদের নিজেদেরই কিছু অক্ষমতা আছে?
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে উবারের স্বচালিত গাড়ির ধাক্কায় নারী নিহত
আরও পড়ুন: স্বচালিত যানের আঘাতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়মুক্তি পেল উবার
এ দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়মুক্তি পায় উবার। বলা হয়, পথচারীটি আসলে চলাচলের জন্য নির্ধারিত পথ দিয়ে পার হচ্ছিলেন না। ফলে দোষ একা সেই গাড়িটির ছিল না। নিহতের পরিবারকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। ঘটনাটা সেখানেই মিটে যেতে পারত। কিন্তু এটা মোটর শিল্পের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। এখানে কোনো ধরনের ভুলের আশঙ্কা রাখা যাবে না। ফলে গাড়িগুলোকে পথে থেকে তুলে নিয়ে আবার শুরু হলো গবেষণা। সেই গবেষণায় উঠে এলো চমকে যাওয়ার মতো তথ্য। ফয়সালা হলো দোষ কার, মানুষের নাকি প্রযুক্তির?
এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় যানগুলোর ভেতরে যে সেন্সর থাকে, তার কাজ হচ্ছে, আশপাশের পরিবেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখানো। এখন অ্যারিজোনার সেই ঘটনায়ও এমনই হয়েছিল। তাহলে ভুলটা কোথায় ছিল? গাড়িটি মাত্র ১.৩ সেকেন্ড আগে সাইকেলসহ পথচারীকে শনাক্ত করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কষে ব্রেক ধরতে হয়। সে সময়টা গাড়ির কাছে ছিল। কিন্তু তার কাছে এরকম একটি তথ্যও ছিল, কোনো গাড়ি যখন আকস্মিক এমন ব্রেক কষে, তখন পেছন থেকে আসা অন্য কোনো যান তাকে আঘাত করতে পারে। তাই সে ব্রেক কষেনি।
ওদিকে, গাড়িতে একজন মানুষ চালকও ছিল এ ধরনের বিপদ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। দুঃখজনকভাবে তিনি তখন মন দিয়ে সিনেমা দেখছিলেন। তাহলে দোষ কীভাবে একা যন্ত্রের হয়?
এ কারণেই আবারও এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। প্রতিটি প্রাণ যেখানে মূল্যবান, সেখানে ছোট্ট একটি ভুলের সুযোগও তো রাখা যায় না, তাই না?
সারাবাংলা/এমএ/এমআই
মোটর শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি