১৮ বছরের আগে রাজনীতিতে আসতে চায় না শিশুরা
২৫ অক্টোবর ২০১৮ ২০:০৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ১৮ বছরের আগে কোনো শিশুকে যেন রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করানো না হয়- এ রকম দাবি ‘শিশু সংসদ সদস্য’দের। পাশাপাশি বিষয়টি আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারেও যোগ করার দাবি জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) গুলশানে লেকশোর হোটেলের লাভিলা হলে সংসদ অধিবেশনে শিশু সংসদ সদস্যরা এ দাবি তোলেন।
শিশু সংসদ সদস্যদের এ দাবির প্রতি একমত পোষণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এস কামাল হোসেন ঘোষণা দেন, ১৮ বছরের আগে কোনো শিশুকে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টি আমরা যুক্ত করতে চাই। এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শিশুরা উল্লাসে মেতে ওঠেন হলরুম জুড়ে। এখানে বসেছিল চাইল্ড পার্লামেন্টের ১৭তম আসর।
‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ ন্যাশনাল চিল্ড্রেন টাস্কফোর্সের এক অনন্য উদ্যোগ যেখানে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিশুরা সত্যিকার সংসদের আদলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে শিশুরাই নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে আনে। তারা বিভিন্ন গবেষণা ও ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে তারপর সেই সমস্যাগুলো পার্লামেন্টের কাছে তুলে ধরে।
এই পার্লামেন্টের কাজ কী? ঠিক জাতীয় সংসদের মতো, যখন কোনো আইন হয়, নীতিমালা হয় সেগুলো যেন শিশুদের কথা মাথায় রেখে করা হয় সেটার সুপারিশ করে তারা।
শিশু স্পিকার মেফতাহুন নাহারের পরিচালনায় বসে শিশু পার্লামেন্টের ১৭তম আসর। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা। অবিকল আসল সংসদের মতো জাতীয় সংগীত গেয়ে শুরু হয় অধিবেশন। স্পিকার আহ্বান করেন তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন উত্থাপনের। একে একে আসতে থাকে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন। আসে সেগুলোর সুপারিশও, তাও শিশু সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে।
যারা শিশু সংসদের সঙ্গে পরিচিত নয় তাদের চোখ ততক্ষণে কপালে। এইসব বিষয়ে প্রশ্ন শিশুরা তৈরি করেছে? নিজে নিজে?
জবাব আসে, হ্যাঁ। দেশের ৬৪টি জেলা থেকে আসা চাইল্ড পার্লামেন্টের শিশু, তাদের সঙ্গে আরও ১৬ জন বিশেষ এলাকার প্রতিনিধি শিশুরা এসেছে যার যার অঞ্চলের শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করতে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় নীতি নির্ধারকদের জানাতে শিশুদের কল্যাণে আসলে কোন কোন জায়গায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই শিশুদের পার্লামেন্টের কাজ করতে সহায়তা করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
তারকাচিহ্নিত প্রশ্নে শিশুরা মোট নয়টি সমস্যা তুলে আনে সংসদের সামনে। তারাই করে সমস্যাগুলো সমাধানের সুপারিশ। এর মধ্যে আছে শিশু হত্যা, শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, মাদকের কবল থেকে শিশুদের রক্ষা করা, নির্বাচন ও রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা। তারা দাবি করে ২০১৩ সালের শিশু আইনের বাস্তবায়ন ও সুপারিশ করে শিশুর শিক্ষা ও সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দের। রাজনৈতিক ইশতিহারে বাজেট বরাদ্দ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান, প্রতিবন্ধী শিশু, পার্বত্য এলাকার শিশু, পথশিশু, যৌনপল্লীর শিশু, আদিবাসী শিশুসহ সকল পিছিয়ে পড়া শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়। ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচারে আনার এবং তা বাস্তবায়নের দাবিও করেন তারা।
শিশুদের এই পার্লামেন্ট পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেলিন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং জাতীয় পার্টির সভাপতি মণ্ডলির সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারী।
এছাড়াও অধিবেশনে অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা এ মারফী, হেড অব চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশন তানিয়া নুসরাত জামান এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক পিয়ার্স ও ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. শামীম জাহান।
শিশু এমপিদের প্রশ্ন ও সুপারিশ শেষে আলোচনার সুযোগ আসে সত্যিকার নীতি নির্ধারকদের। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, শিশুদের জন্য জুভেনাইল কোর্টের আইন পাশ হয়েছে, শীঘ্রই এর বাস্তবায়ন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন শিশু সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া ও আনন্দময় শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের আহ্বার জানান নূহ আলম লেলিন।
আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহের বিধান থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন বিএনপি নেতা ড. মঈন খান। শিশুশ্রম বন্ধের জন্য ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেন শামিম হায়দার পাটোয়ারী। শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলেন মোয়াজ্জম হোসেন আলাল।
অধিবেশন শেষে শিশু পার্লামেন্টের স্পিকার মেফতাহুন নাহার ও তার ডেপুটি স্পিকার মাহমুদা সিদ্দিকা এলিজা বসেন সংবাদ সম্মেলনে। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেশাদারি দায়িত্বশীলতা নিয়ে।
মেফতাহুন নাহার বলেন, ‘এটি চাইল্ড পার্লামেন্টের ১৭তম আসর। এর আগেও পার্লামেন্ট থেকে আমরা অনেকগুলো সুপারিশ করেছি যা নীতি নির্ধারক মহলে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়ে, যা হয়নি তা হচ্ছে বাস্তবায়ন। যতদিন তা বস্তবায়ন না হয় এবং শিশুদের সমস্যা সমাধান না হয় আমরা এমনিই পার্লামেন্টে আসব শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করতে। তাদের সমস্যা তুলে ধরতে এবং সমস্যা সমাধান চাইতে।’
সারাবাংলা/এমএ/একে