আসছে শীত, জমছে পিঠার আসর
২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:২২
।। আরিফুর ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ভোজনপ্রিয় বঙালির খাবার তালিকায় পিঠা-পুলির স্থান শীর্ষেই বলা চলে। শীত এলে তো কথাই নেই। বাসাবাড়ির পাশাপাশি বাজারে বসে পিঠা বিক্রির ধুম। প্রতিবারের মতো এবারও শীতের আমেজ প্রকৃতিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসছে পিঠার আসর।
‘এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো হলুদ পাতার মতো।’
জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো শিশির ঝরিয়ে প্রকৃতিতে আসতে শুরু করেছে শীতকাল। হেমন্তের শুরু না হতেই শীতের এমন আগমনী দিনের প্রভাব পড়ছে নগর জীবনেও। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার দোকানে পসরা সাজতে শুরু করেছে। বিক্রিবাট্টাও চলছে বেশ।
চিতই পিঠা। রাজধানীসহ সারাদেশের অতিপরিচিত একটি নাম। প্রায় সারাবছরই এ পিঠার দেখা মিললেও শীত এলে কদর বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পিঠা তৈরিতে। শীত আসতে এখনও ঢের বাকি থাকলেও তাই এখনই পিঠার বিক্রি বেড়েছে।
জেলা শহরের রাস্তার পাশে মাটির চুলোয় টাটকা খেজুরের রসের পিঠাসহ নানান ধরনের পিঠা পাওয়া গেলেও ঢাকা শহরে মূলত ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, চাপটি পিঠা ও তেল পিঠার আধিক্য।
ভাপা পিঠা মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় বিক্রি হয়। বেলা বাড়লে এ পিঠা পাওয়া যায় না। খুব ভোরে শুরু হয়ে বেলা ১০/১১টা পর্যন্ত এবং বিকালে শুরু হয়ে রাত ৯/১০টা পর্যন্ত এ পিঠা বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য পিঠা সারাদিনই পাওয়া যায়।
শীতের শুরুতেই পুরান ঢাকার সবখানেই বিভিন্ন পদের পিঠার কদর বেড়েছে। ফলে পিঠা ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের চাহিদামতো তৈরি করছেন বৈচিত্র্যময় সব পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে— পাটিসাপটা, খেজুর পিঠা, ভাজা পুলি, সিদ্ধ পুলি, দিপ পিঠা, নকশী পিঠা, মালপোয়া, পোয়া পিঠা, চিতই পিঠা, চাপটি পিঠা, তেল পিঠা প্রভৃতি।
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে কাছে জনসন রোডে চার জন পিঠা বিক্রি করেন। তাদের একজন সালাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, শীত শুরু হওয়ায় পিঠার কদর বেড়েছে। সারাবছরের তুলনায় শীতে পিঠার বিক্রি বেশি হয়। পিঠার অর্ডারও বেড়েছে। অর্ডার দিয়ে পিঠা নিতে হলে অন্তত একদিন আগে অর্ডার দিতে হয়।
শহরে সারাবছর যেসব পিঠা পাওয়া যায়, তার অধিকাংশ থাকে চিতই পিঠা। দোকানিরা পিঠা-প্রেমিকদের আকর্ষণ করার জন্য সরিষাসহ হরেক রকমের ভর্তার ব্যবস্থা করে রাখেন, যেন পিঠা-প্রেমিকরা এ পিঠা তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারেন।
সদরঘাট কোর্ট এলাকার দোকানি মিরাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোর্ট প্রঙ্গণে ১২ মাসই চিতই পিঠা বিক্রি করি। তবে অন্যান্য সময়ের চাইতে শীতে পিঠা বিক্রি অনেকগুণ বেড়ে যায়। কারণ সেই সময় চিতই পিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড়ের ভাপা পিঠাও বিক্রি হয়।’ শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাভ থাকে বলে জানান তিনি।
ওয়ারী থেকে সদরঘাট কোর্ট এলাকায় পিঠা খেতে আসেন শাকিল আহমেদ। তিনি সারাবাংলাকে জানান, পিঠা আমার খুব পছন্দ। পুরান ঢাকার কোর্ট এলাকায় সারাবছরই পিঠা পাওয়া যায়। তাই এ পথে এলেই নিয়মিত পিঠা খেয়ে যাই। তবে শীতের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। এসময় পিঠা খেতে দারুণ লাগে।
ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথের পিঠার দোকানি পারভেজ বলেন, ১২ মাসই পিঠার ব্যবসা রমরমা চলে। পিঠা গ্রাহকদের জন্য পিঠার সাথে কয়েক পদের ভর্তা দেওয়া হয়; যেন মানুষ খেয়ে মজা পায়, আর বারবার খেতে আসে। শীতের মধ্যে কয়েক রকমের পিঠা তৈরি করে থাকি। পিঠার বিক্রি এখনই বেড়েছে। শীত আরেকটু বাড়লে পিঠার বেচাবিক্রি আরও বাড়বে।
সারাবাংলা/এআই/এমএস
খেজুর পিঠা চিতই পিঠা পাটিসাপটা পিঠা ভাজা পুলি ভোজনপ্রিয় বঙালি শীতের আগমন