পোস্তগোলা ব্রিজ রণক্ষেত্র, ট্রাকচালক নিহত, আহত শতাধিক পুলিশ
২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১১:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: টোল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। আর কমপক্ষে ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ এখনও দফায় দফায় চলছে। গোটা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাশাপাশি সংঘর্ষের কারণে পোস্তগোলা ব্রিজ ঘিরে উভয় পাশের যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্রিজের দুই পাশেই তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৮টায় পোস্তগোলা ব্রিজে টোল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে টোল প্লাজায় কর্মরতদের সঙ্গে ট্রাক শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ এ সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় শ্রমিকরা।
এসময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে পুলিশ।
একজন পুলিশ সদস্য সারাবাংলাকে জানান, শ্রমিকরা বেশকিছু পুলিশকে পোস্তগোলা ব্রিজের নিচের দিকে একটি দোকানে অবরোধ করে রাখে। পরে ওই দোকানে আগুন দেওয়ার চেষ্টাও করে শ্রমিকরা।
কেরাণীগঞ্জ থানার কনস্টেবল রফিক সারাবাংলাকে জানান, শ্রমিকরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তারা প্রায় দুই ট্রাক ইট ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। পরে সেগুলোই পুলিশের ওপর ছুঁড়তে থাকে। এতে একের পর এক পুলিশ সদস্য আহত হতে থাকলে পুলিশ অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ঘটনায় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, পুলিশের গুলিতে একজন ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। এর বাইরে একজন ভিক্ষুক ও একজন পথচারীও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
কেরাণীগঞ্জের ইকুরিয়া জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার কারিমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ১০টা ১০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিন জন হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন ট্রাকচালক। তার পেটে গুলি লেগেছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থাতে তার মৃত্যু হয়।
কারিমুল হাসান জানান, বাকি দুজনের দুই পায়েই গুলি লেগেছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া সারাবাংলাকে জানান, পোস্তগোলায় সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে প্রথমে মাসুদ (৩০) ও আকাশ (২৫) নামে দু’জনকে নিয়ে আসা হয়। পরে আরও সাত জনকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে আলামিন (২০) পেটে, সিদ্দিক (৪০) বাম কাঁধে, সবুর (৩০) মাথায়, লিটন (৩৯) মাথায়, বিল্লাল (২৩) বাম পায়ে, মানিক (৪০) পায়ে এবং অজ্ঞাত একজন বাকপ্রতিবন্ধী (আনুমানিক ২৫) পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
শ্রমিকরা বলছেন, পোস্তগোলা ব্রিজে আগের ট্রাকের টোল ছিল ৩০ টাকা। গত ২২ অক্টোবর সেই টোল বাড়িয়ে করা হয় ২৪০ টাকা। হঠাৎ করে এত বেশি টোল বাড়ানোয় তারা বিপাকে পড়েছেন। অবিলম্বে এই টোল কমিয়ে আনার দাবি জানান তারা।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ২০ জনেরও বেশি শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া, বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
কেরাণীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান সারাবাংলাকে বলেন, কয়েকদিন আগে এই ব্রিজে টোল বাড়িয়েছে। আজ (শুক্রবার) সকাল ৭টার দিক থেকেই ট্রাক শ্রমিকরা রাস্তায় ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। পরে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে টোল আদায়কারী কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ওসি বলেন, খবর পেয়ে পাঁচ-ছয় জন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কিন্তু পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আমরা পাশেই বিআরটি কার্যালয়ের ভেতরে চলে যাই, সেখানে একটি টিনশেড ঘরে আশ্রয় নেই। সেখানে ইটবাহী একটি ট্রাক প্রচণ্ড গতি নিয়ে এসে ধাক্কা দেয়। পরে আমরা পাশের মায়ের দোয়া হোটেলে গিয়ে আশ্রয় নেই। কিন্তু সেখানেও আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। সামনেই একটি সিলিন্ডার দিয়ে আগুনও ধরিয়ে দেয়।
ওসি শাহ জামান বলেন, এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আমাদের উদ্ধার করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এছাড়া রাবার বুলেট ও শটগানও ব্যবহার করা হয়েছে।
শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানান ওসি শাহ জামানও। তবে পুলিশের গুলিতে একজন ট্রাকচালক নিহত হওয়া ও দু’জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানেন না বলে জানান তিনি।
ছবি: হাবীবুর রহমান
সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম/টিআর