‘যানচলাচল স্বাভাবিক হলে ফের টোল নেওয়া হবে পোস্তগোলা ব্রিজে’
২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:২৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের জের ধরে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজে টোল ছাড়াই যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হলেও যানচলাচল স্বাভাবিক হলেই আবারও টোল নেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পোস্তগোলা ব্রিজের টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা ইজারাদার মোহাম্মদ আলম।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের কারণে ব্রিজের দুই পাশে হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। এগুলো সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করতেই টোল ছাড়াই গাড়ি চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। যানচলাচল স্বাভাবিক হলেই আবার টোল নেওয়া শুরু হবে।
শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) মোহাম্মদ আলম সারাবাংলাকে এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন- পোস্তগোলা ব্রিজে যানচলাচল শুরু, নেওয়া হচ্ছে না টোল
এর আগে, পোস্তগোলা ব্রিজে টোল বাড়ানোর কারণে শুক্রবার সকালে টোল আদায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষ বেঁধে যায় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে। দফায় দফায় সংঘর্ষে এক ট্রাকচালক নিহত ও দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষের জের ধরে সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পোস্তগোলা ব্রিজের উভয় পাশে কয়েক হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। এতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এসময় ব্রিজের দুই পাশের বাসিন্দাদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে টোল ছাড়াই পোস্তগোলা ব্রিজে যানচলাচলের সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুন- পোস্তগোলা ব্রিজ রণক্ষেত্র, ট্রাকচালক নিহত, আহত শতাধিক পুলিশ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার মোহাম্মদ আলম বলেন, টোল-ফ্রি’র এই সুবিধা সাময়িক। এখানে সেনাবাহিনীর বড় একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের সব মালামাল এই ব্রিজ দিয়েই আনা-নেওয়া হয়। কিন্তু সকাল থেকে সংঘর্ষের কারণে রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার গাড়ি আটকে আছে। ওই প্রকল্পের মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ থেমে আছে। মানুষের যাতায়াতেও দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। সে কারণে গাড়িগুলো সরিয়ে রাস্তা ফ্রি করতে সাময়িকভাবে টোল ছাড়াই গাড়ি চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ইজারাদার মোহাম্মদ আলম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির একজন সহকারী সম্পাদক। সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি পোস্তগোলা ব্রিজের ইজারা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছি। কাজেই কারও মুখের কথায় এই টোল ফ্রি সুবিধা চালু রাখব না, সে যেই হোক।
আলম বলেন, দীর্ঘদিন এই সেতুতে সরকার টোল বসাতে পারেনি। গত ২২ অক্টোবর থেকে আমি টোল চালু করেছি। এতে সরকার রাজস্ব আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। এখানে শাহীন চেয়ারম্যান কিংবা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বললেই তাদের মুখের কথায় টোল আদায় বন্ধ করব না। যান চলাচলের পর রাস্তা স্বাভাবিক হলেই টোল চালু হবে।
আগেও এই সেতুতে টোল নেওয়া হতো এবং ২২ তারিখে টোলের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইজারাদার আলম বলেন, আগে একটি সিন্ডকেটের মাধ্যমে এই সেতুতে টোল আদায় করা হতো। কিন্তু টোলের টাকা সিন্ডিকেটের সদস্যরাই সবাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নিত। স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরাও এই টাকার ভাগ পেতেন। এ থেকে সরকার কোনো রেভিনিউ (রাজস্ব) পায়নি।
আজকের (শুক্রবার) সংঘর্ষ প্রসঙ্গে আলম বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল টোল চালুর কয়েকদিন পর পাঁচ-ছয় জন চালককে দিয়ে রাস্তা ব্যারিকেডের মাধ্যমে আজকের গণ্ডগোল শুরু করে। জেলা প্রশাসন এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই সংঘর্ষের পেছনে কারা রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রশাসনেরই। আশা করব, প্রশাসন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
টোল বাড়ানোর প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে, এ পরিস্থিতিতে টোল কমানোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা ইজারা নিয়েছি। তারা লিখতভাবে কোনো নির্দেশ দিলে আমরা টোল কমাব কিংবা টোলমুক্ত করে দেবো। অন্যাথায় টোল কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
ছবি: হাবীবুর রহমান
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর