পায়রা পাড়ে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’য় শেখ হাসিনা যাচ্ছেন শনিবার
২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:২০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মা বহুমখী সেতু, পায়রা বন্দর ও বঙ্গোপসাগরের ব্লু ইকোনমিকে ঘিরে করে দক্ষিণ জনপদে বহুমুখী সম্ভাবনার হাতছানিতে এক উজ্জ্বল সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ উঁকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে পায়রা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এই সমুদ্রবন্দর ও সামুদ্রিক অর্থনীতির বদৌলতে বদলে যাবে দক্ষিণের সামগ্রিক অগ্রগতি। সেই দক্ষিণ জনপদের পটুয়াখলী ও বরগুনায় একঝাঁক উন্নয়ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের উপহার নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুনর্বাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ উদ্বোধনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিফলক স্থাপন ও উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে ১৬ একর জমির ওপর পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের তৃতীয় এই সামুদ্রিক বন্দরকে ভিত্তি করে দক্ষিণ জনপদের সামগ্রিক উন্নয়নে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। ক্ষমতাসীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে ১০টি মেগাপ্রকল্প নিয়ে কাজ করছে, তার মধ্যে একটি পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। পদ্মা বহুমখী সেতু হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ নিশ্চিতের ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় অগ্রগতির মাইলফলকে পায়রা বন্দরকে ঘিরে আগামী দিনে দক্ষিণ জনপদ হয়ে উঠবে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নতুন এ বন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য গড়ে উঠবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল না, সমগ্র বাংলাদেশ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও এটি একটি শুভ সূচনা।
পায়রাতে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে দক্ষিণ জনপদে দেবে নতুন গতি। এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পুনর্বাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। বলা হচ্ছে, গোটা এশিয়ার মধ্যে পুনর্বাসন প্রকল্পের একটি ইউনিক রোল মডেল এই ‘স্বপ্নের ঠিকানা’।
এখানে বসবাসের জন্য থাকছে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অর্জিত অর্থে স্বপ্নের ঠিকানা’র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার (প্রা.) কোম্পানি লিমিটেড। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে এখানে থাকছে একটি কারিগরি স্কুল। এই দক্ষ জনশক্তি যেন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে এখানকার শিক্ষার্থীদের পাঁচটি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হবে। একটি ভোকেশনাল স্কুলে পাঁচটি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার নজির বিশ্বে এই প্রথম।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যসূচি থেকে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে পায়রার উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও বয়লার টাওয়ার পরিদর্শন করবেন এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাবেন। সেখানে তিনি মৎস্য পোনা অবমুক্ত করবেন, বৃক্ষরোপন করবেন, নবনির্মিত পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাড়ি পরিদর্শন করবেন এবং পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাড়ির চাবি ও দলিল হস্তান্তর করবেন। সিএমসি স্কাউটসের চেক গ্রহণেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর দুপুর ১২টা ৫০মিনিটের দিকে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে নবনির্মিত ১৩২ আসনের পাঁচ তলা ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজে নবনির্মিত একাডেমিক কাম-এক্সামিনেশন হল নির্মাণ; হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার কলেজে চার তলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; ইসহাক মডেল ডিগ্রী কলেজে চার তলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে চার তলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কলেজে চার তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন কলেজে চার তলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; সুবিদখালী ডিগ্রি কলেজে চার তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; দুমকি জনতা ডিগ্রি কলেজে চার তলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ; দুমকি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন; মির্জাগঞ্জ ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, ক্ষমতা ১০/১৪ এমভিএ; পায়রা সমুদ্র বন্দরে শেখ হাসিনা সড়ক, পায়রা সমুদ্র বন্দরের সার্ভিস জেটি, পায়রা সমুদ্র বন্দরের মসজিদ, পায়রা সমুদ্র বন্দরের অফিসার্স গেস্ট হাউজ; পায়রা সমুদ্রবন্দরের স্টাফ ডরমিটরির (১৬টি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন রয়েছে এসব প্রকল্পের মধ্যে।
এছাড়াও পটুয়াখালী সরকারি কলেজে পাঁচ তলা বিজ্ঞান ভবন, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী জিসি-পটুয়াখালী বেতাগী আর এইচডি (থানা ব্রিজ) সড়কের শ্রীমন্ত নদীর ওপর ৯৬ মি. ব্রিজ; উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; পায়রা সমুদ্র বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন এলাকা (পাঁচটি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বরগুনা জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও নামফলক স্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে— বরগুনা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ; বামনা উপজলো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন; বেতাগী উপজলো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন; বরগুনা জেলা গণগ্রন্থাগার; বরগুনা জেলা পুলিশ লাইনে মহিলা ব্যারাক নির্মাণ; দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ র্শীষক প্রকল্পরে আওতায় বরগুনা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আগের নির্মিত একতলা হোস্টেলের ওপর দ্বিতীয় তলা হোস্টেল নির্মাণসহ প্রথম তলার নবায়ন; বরগুনা জেলার আমতলী থানা ভবন; বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ডৌয়াতলা ইউনয়িন ভূমি অফিস (উপকূলীয়); হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস (উপকূলীয়); ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন; এম বালিয়াতলী ডি. এন কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, বরগুনা সদর; সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, পাথরঘাটা; ইউনুস আলী খান ডিগ্রি কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, আমতলী; উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, তালতলী; বাকেরগঞ্জ-পাদ্রীশিবপুর-কাঠালতলী-সুবিদখালী-বরগুনা সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ; চুড়রিচর ইউনয়িন পরষিদ-হাজারবিঘা-কামড়াবাদ-পুরাকাটা ফেরিঘাট সড়কের আরসিসি গার্ডার ব্রিজ; গৌরচিন্না ইউনয়িন পরষিদ কমপ্লেক্সে ভবন; বেতাগী উপজেলার বদনীখালী আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, তালতলী উপজলো পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, বামনা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ; একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন, বামনা; একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন, তালতলী (২১টি)।
এরপর দুপুর ৩টায় বরগুনার তালতলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর/এমএইচ