Sunday 19 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ইয়াবা গডফাদারের স্মরণে মেজবান


২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪৪

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: র‌্যাব-পুলিশের তালিকায় আন্তর্জাতিক মাদক বিক্রেতাখ্যাত এক সময়ের ইয়াবা গডফাদার মো. ফারুক হোসেন (৪২) স্মরণে মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে। গত বছরের ২০ অক্টোবর ফারুক র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার ভাই মো. সেকান্দর গ্রামের বাড়িতে মেজবানের আয়োজন করে ৬ হাজার মানুষকে খাইয়েছেন।

সেকান্দর নিজেও মাদক বিক্রেতা হিসেবে তালিকাভুক্ত। খবর পেয়ে পুলিশ মেজবানে হানা দিলে সেকান্দর পালিয়ে যায়।

শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের বাগদণ্ডি নন্দেরখীল গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত মাদক বিক্রেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে মেজবানের আয়োজন করা নিয়ে এলাকায় চলছে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা।

ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (বাগদণ্ডি নন্দেরখীল) আবুল কালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেকান্দর তার মাদক বিক্রেতা ভাই এবং বাবা সাইফুল হকের জেয়াফতের আয়োজন করেছিলেন। গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ দাওয়াতি ছিলেন। শহর থেকেও অনেকে এসেছেন। মুসলিমদের জন্য গরুর গোসত, ডাল আর নলা ছিল। হিন্দুদের জন্য ছিল মুরগি।’

ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রণবীর ঘোষ টুটুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকেও নিমন্ত্রণ করেছিল। খুব অনুরোধ করেছিল, আমি যাইনি। শুনেছি সেকান্দর নিজে লোকজনকে ডেকে ডেকে আপ্যায়ন করছেন। সেখানে গেলে বিতর্কিত হয়ে যেতাম, সেজন্য টেকনিক্যালি এভয়েড করেছি।’

আটটি গরু, দুইটি মহিষ এবং ২৫০টি মুরগি জবাই করে ফারুকের বাড়ির পাশের একটি মাঠে এই মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেয়ামত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফারুকের ভাই সেকান্দরও একজন ইয়াবা বিক্রেতা। আমার থানায় একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। ফারুকের জন্য সেকান্দর মেজবানের আয়োজন করেছে শুনে আমরা গিয়েছিলাম। সেকান্দর এলাকায় এসেছে শুনে মূলত তাকে গ্রেফতার করার জন্যই গিয়েছিলাম। তবে আমরা যাওয়ার খবর পেয়েই সে দ্রুত পালিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, গত বছরের ২০ অক্টোবর গভীর রাতে কোতোয়ালি থানার আইস ফ্যাক্টরি রোড বরিশাল কলোনি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ফারুক। বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক ফারুক নগরীতে ‘কালা ফারুক’ ও ‘বাইট্টা ফারুক’ নামে পরিচিত। ফারুকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে ১৮টিরও বেশি মামলা ছিল।

পুলিশ-র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লোকাল বাসে ঘড়ি চুরি থেকে শুরু করে ইয়াবা গডফাদার হয়ে ওঠেন ফারুক।

নগরীর নিউমার্কেট-রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় চুরি করতে গিয়ে একই এলাকার বরিশাল কলোনির মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে ফারুকের। ইয়াবা-ফেনসিডিল বিক্রি করতে গিয়ে এক সময় বরিশাল কলোনির অন্যতম নিয়ন্ত্রক মনিরের ডান হাত হয়ে ওঠেন। বছর ঘুরতেই দু’জন মিলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন বরিশাল কলোনিতে। সেখান থেকে ফারুকের উত্থান শুরু হয়।

নগরীতে ইয়াবা বিক্রি করলেও পটিয়ার ধলঘাট নন্দেরখীল এলাকায় তিনি ইয়াবা ও মাদক রাখতেন। চট্টগ্রামে এনে বিভিন্ন স্থানে পাচারও করতেন।

র‌্যাবের দাবি, ফারুক ছিলেন আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য। ফারুক মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে আসতেন। এছাড়া সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক নিয়ে আসতেন। চট্টগ্রামে লালচে ইয়াবার পাশাপাশি প্রথম গন্ধহীন হলুদ ইয়াবার আমদানি ফারুকের মাধ্যমেই হয়েছে বলে তথ্য আছে র‌্যাবের কাছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর