Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাতিল অধ্যাদেশে গঠিত ব্যবস্থাপনা বোর্ডে চলছে শিশু হাসপাতাল


২৮ অক্টোবর ২০১৮ ১০:০৫

 ।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরকারি সাহায্যপুষ্ট হলেও সরকারি নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয় এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবেই চলে আসছে।

তবে যে ব্যবস্থাপনা বোর্ড দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে সেই বোর্ডটি আইনত বৈধ নয়। একটি বাতিল হওয়া অধ্যাদেশে বোর্ডটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নিয়মানুযায়ী বোর্ড গঠিত হতো। কিন্তু ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায় সরকার হাসপাতাল পরিচালনায় একটি অধ্যাদেশ জারি করে। যদিও পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার সেই অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়। এরপর ২০১৬ সালে গঠিত হাসপাতালের বর্তমান বোর্ড সেই বাতিল হওয়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে বাতিলকৃত অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত ব্যবস্থাপণা বোর্ডের বৈধতা নিয়েও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের চেয়ারপারসন জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুনকে সভাপতি ও শিশু হাসপাতালের পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮’ অনুযায়ী এ ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হলো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮’ জারি করা হলেও পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদে সেটি আর পাস হয়নি। ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ প্রকাশিত নবম জাতীয় সংসদের ‘বিশেষ কমিটি’র প্রথম রিপোর্টে বলা হয়, ৬৮টি অধ্যাদেশ গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে কমিটি মনে করে না। বিশেষ কমিটি কর্তৃত বাতিল হওয়া অধ্যাদেশগুলোর তালিকায় ৫৮ নম্বরে ছিল ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮।

বিজ্ঞাপন

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিশু হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, ২০০৮ সালের পর একাধিক ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হলেও সে সব বোর্ড ২০০৮’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত হয়নি। কারণ ২০০৮’র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ১০ জনে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০০৯, ২০১২, ২০১৩ সালে গঠিত বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১, ১৪ ও ১৪ জন করে। সেই বোর্ডগুলোতে যেকোনো পেশার অনেক যোগ্য ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু বর্তমানে যে বোর্ড কার্যকর রয়েছে সেটি ২০০৮’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১০ সদস্যের।

শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে পাস না হওয়ায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা বোর্ড বৈধ নয়। তারা হাসপাতালের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমানের এ অবৈধ বোর্ড ভেঙে নতুন করে বোর্ড গঠনের দাবি জানান।

২০০৮ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০ জন। চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব ছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জনকারী দুই ব্যক্তি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফিুদ্দিন আহমেদ ও দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কাশেম হুমায়ুন), চিকিৎসা পেশায় সুনাম অর্জনকারী দুই চিকিৎসক বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ (হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লা), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর