Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্মঘটে চড়া সবজির বাজার, ক্ষতির মুখে আড়তদাররা


২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:১৬

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। দেখা দিয়েছে উর্ধ্বমুখী ভাব। বাজারে সরবরাহ না থাকায় কমবেশি সব ধরণের সবজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্তও। আর একদিনের ব্যবধানেই খুচরা বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে, আড়তদাররা বলছেন, প্রতিদিন একেক আড়তের ক্ষতি প্রায় ৪ হাজার টাকা।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারে শিম ১০০ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, ঢেঁরশ ৩৫ টাকা, পঁটল ৪০ টাকা, শশা ৫০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, করলা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন, গত শুক্রবারেও শিম ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অথচ আজ ৯০ টাকার কমে বিক্রি সম্ভব নয়।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দাম তো কিছুটা বাড়বেই। একে হচ্ছে অবরোধ, তারপরেও সবজির বাজার তো সব সময় পরিবর্তনশীল। তারেক হোসেন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, কমবেশি সব সবজিতেই দাম বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। বাজারে সবজি আছে। কিন্তু শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে দাম বেড়েছে। যেখানে আগে গাড়ি ভাড়া ছিল ১০ হাজার, এখন সেখানে পরিবহন খরচ ৩০ হাজার টাকাও পড়ছে।

ফুলকপি বিক্রেতা কাওসার বলেন, প্রতিপিস ফুলকপি গতকাল ৩০ টাকায় বিক্রি করলেও আজ ৪০ টাকায় বিক্রি করছি। সড়ক পথ বন্ধ থাকায় বাজারে মাল আসেনি। তাই দাম বেশি।

বাজার করতে আসা ফার্মগেটের বাসিন্দা নাদিম বলেন, সব সবজিরই দাম বাড়তির দিকে। পরিবহন ধর্মঘটের নামে মানুষকে জিম্মি করে সবজির দামও বাড়ানো হয়েছে।
ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা ফাহমিদা খাতুন বলেন, কোন কিছু হলেই সবজির দাম বাড়ে। সবজির দাম বাড়া এখন নিত্য নৈমত্তিক। অথচ কারো কিছু করার নেই। কিন্তু আমাদের তো খেয়ে থাকতে হবে। কিছু না কিছু কিনতে হবে।

এদিকে, খুচরা বাজারে অধিকাংশ সবজি গতকালের চেয়ে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। মহাখালীর বউবাজারে শিম ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ ও টমোটো ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, পাতাকপি ৪০ টাকা ও ফুলকপি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির দামও ৪০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে। বিক্রেতারা বলছেন, সব ধরণের সবজিই তাদের ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
বউবাজারের সবজি বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গতকাল শিম ৭০ টাকায় কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। এর আগেও দাম এমনই ছিল। কিন্তু আজ পাইকারী বাজার থেকে আমাদেরকেই শিম কিনতে হয়েছে ৯০ টাকায়, আর বিক্রি করছি ১০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, গতকাল ফুলকপি ৪০ টাকা পিসে বিক্রি করলেও আজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। কারণ গতকাল ফুলকপি কিনতে পেরেছি ৩০ টাকায়, আজ কিনতে হয়েছে ৫০ টাকায়।

কারওয়ানবাজারের সবজির আড়তদারের সরদার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, অন্য সময় প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ট্রাক আসে। কিন্তু গতকাল ২০ টি ট্রাকও আসতে পারেনি। এছাড়া দেড়িতে গাড়ি আসায় কোনো কোনো আড়তদারের সবজি মজুদ রয়ে গেছে। বিক্রি করতে পারেনি। তবে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তিনি জানান, সাধারণত ট্রাক ভাড়া ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এখন ৩০ হাজার টাকা দিলেও ট্রাক আসতে চায় না। এতে আমাদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে সবজি চাষীদেরও ক্ষতি হচ্ছে। হাবিবুল্লাহর মতে, সড়ক পথ বন্ধ থাকায় প্রতি ঘরে দিনে অন্তত ৪ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তার ধারণা, কারওয়ানে বাজারে প্রায় ২ হাজার আড়তঘর আছে। সে হিসেবে আড়ত কেন্দ্রিক ক্ষতি অন্তত ৮০ লাখ টকা। তবে অন্য এক আড়তদার জানান, বাজারে বৈধ হিসেবে ৫০০’র বেশি আড়ত নেই।

মোস্তফা কামাল নামের এক আড়তদার সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের কোন ক্ষতি নেই। ক্ষতি হচ্ছে পাবলিকের, কৃষকের। ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন ট্রাক আসে নি। এবং বের হয়েও যায়নি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ৩৬ ঘন্টায় পথে চলমান অবস্থায় ট্রাকে যে সব সবজি ছিল তা নষ্ট হচ্ছে। জেলা শহরগুলোতে হয়তো ট্রাক ভর্তি সবজিও নষ্ট হতে পারে। তবে কতোটুকু নষ্ট হচ্ছে বা হয়েছে আমরা তা বলতে পারবো না।

এদিকে, খুচরা বাজারে একদিনেই কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গতকাল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। মহাখালীর বউবাজারের সবজি বিক্রেতা মফিজুল সারাবাংলাকে বলেন, গাড়ি বন্ধ থাকায় বাজারে মরিচ নেই। ফলে কাঁচামরিচ আজ পাল্লাতে (পাঁচ কেজি) ৩০০ টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। মফিজুল আরও জানান, শশা গতকাল ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হলেও আজ দাম পড়ছে ৬০ টাকা। বাজার করতে আসা গৃহিনী আরেফা খাতুন ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, শুক্রবারও বাজার করেছি। কিন্তু শ্রমিক ধর্মঘটের নামে হঠাৎ এভাবে সবজির দাম বাড়া মেনে নিতে পারছিনা। খুচরা আরও কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে।

 

সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর