মঙ্গলবার বৈঠক: সহসা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নেই
২৯ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:৪৩
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কবে নাগাদ রোহিঙ্গারা সসম্মানে নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারবেন, এ জন্য মিয়ানমার সরকার কতটুকু কী করেছে— তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) দুই দেশের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির তৃতীয় বৈঠক রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার এখনও অনূকুল পরিবেশ তৈরিতে কিছুই করেনি। উল্টো এখনও দেশটিতে রোহিঙ্গা নির্যাতন চলছে। খুব শিগগির প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কোনো আলামতই দেখা যাচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা সংকট দূর করতে দুই দেশের গঠন করা যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বে নেপিডোর প্রতিনিধি দলের সোমবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন। পরের দিন বুধবার (৩১ অক্টোবর) মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।
যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির তৃতীয় বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
রোহিঙ্গা নাগরিকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সঙ্গে যুক্ত— এমন একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলা’কে জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে নেপিডো’কে ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা’র তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের ফেরত নিতে সম্মতি জানিয়েছে মিয়ানমার। কমবেশি ১৪শ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে না বলে দেশটি জানায়। বাকি প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার এখনো যাচাই-বাছাই শেষ করতে পারেনি মিয়ানমর।
এছাড়া জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে কমবেশি ২০ হাজার রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক তথ্য নিবন্ধনের কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের পর ঢাকার তরফ থেকে গত আট মাস আগে যাচাই-বাছাই করতে এক তালিকায় ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তথ্য-উপাত্ত নেপিডোকে দেওয়া হয়েছে। আট মাসের এই দীর্ঘ সময়েও মিয়ানমার ওই তালিকার পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষ করতে পারেনি। অথচ ঢাকা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে বলে নেপিডো ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। তাই এবারের বৈঠকে মিয়ানমারের কাছে জানতে চাওয়া হবে যে তারা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য কতটুক প্রস্তুত এবং কী কী প্রস্তুতি শেষ করেছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখা জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক বিশ্ব বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে এখনও অনূকল পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর অর্থ হচ্ছে তাদের আবারও মুত্যুকূপে ঠেলে দেওয়া।
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ক্যারেন পিয়ারস গত ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাখাইনের বিপর্যয় স্থায়ী রূপ নিয়েছে। রাখাইনে এখনও মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটছে।’
রাষ্ট্রদূত ক্যারেন নিরাপত্তা পরিষদের গত ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাজ্য, আইভরি কোস্ট, ফ্রান্স, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস, পেরু, পোলান্ড, সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র— এই ৯ দেশের পক্ষে বিবৃতি দেন।
রাষ্ট্রদূত ক্যারেন পিয়ারস বলেন, ‘বাংলাদেশের শিবিরে যেসব রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, তারা এখনই মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবে না। কেননা মিয়ানমারে এখনও নির্যাতন চলছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য এখনও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কোনো দায়িত্বজ্ঞানের মধ্যে পড়ে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের নামে নাগরিকদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘণের সনদ দেওয়া হয়নি। মিয়ানমার সরকার সার্বভৌমত্বের নামে রাখাইনে যে অমানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তার বিচার হওয়া উচিত। আর্ন্তজাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়েছে। আট হাজার রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম ব্যাচ এই আট হাজার রোহিঙ্গা দিয়ে খুব শিগগিরই শুরু হতে হচ্ছে।’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার এখন আগের থেকে অনেক বেশি বৈশ্বিক চাপে রয়েছে। এই চাপের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আট হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের কথা বলে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এখনই প্রত্যাবাসন শুরুর কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। তবে এই চাপ মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে বাধ্য করবে।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর