বিএনপি নির্বাচনে এলে মহাজোটে যাবে বিকল্পধারা-ন্যাপ
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫৫
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যাবে অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ এবং জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)।
এছাড়া সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশও মহাজোটের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে তা লুফে নেবে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ন্যাপের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে ‘যুক্তফ্রন্টে’র ব্যানারে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামীবিরোধী জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট থেকে আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ায় নতুন মিত্রের সন্ধানে ছিলেন বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট। এ কাজে কিছুটা সফলও হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে গত ১৬ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিলে ওই দিনই বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপিকে তার বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। পরদিন ১৭ অক্টোবর বি. চৌধুরীর বাসায় যান ন্যাপ ও এনডিপির শীর্ষ নেতারা।
এরই মধ্যে যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশ। অন্যদিকে, বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও সাবেক মন্ত্রী (এরশাদের মন্ত্রিসভা) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ।
বিকল্পধারায় যোগ দেওয়া বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এসব সাবেক নেতাদের নিয়ে রোববার (২৮ অক্টোবর) বারিধারার বাসায় বৈঠক করেন বি. চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই প্রেসিডিয়াম বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের একটা ধারণা দেন বি. চৌধুরী।
দলের নেতাদের বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ১৫ দিনের মধ্যেই জানা যাবে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনে যাবে কি না। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায়, তাহলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মতো বি. চৌধুরীও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেবেন।
অন্যদিকে, বিএনপি যদি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়, তাহলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সমমনাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবে বিকল্পধারা। বিএনপি জোট ছেড়ে আসা বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টিও থাকবে যুক্তফ্রন্টের এই ব্যানারে। বিএনপি জোটে থাকা আরও কয়েকটি নিবন্ধিত দলকে যুক্তফ্রন্টে টানার চেষ্টা করবে বিকল্পধারা।
প্রেসিডিয়ামের বৈঠক শেষে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে না বিকল্পধারা। তবে বিকল্পধারা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি দলটির আছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল অথবা আওয়ামী সমর্থিত বিকল্প বিরোধী জোট হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণেই বিএনপি জোট ছেড়ে আসা শরিক দল ও বিএনপি-জাপার সাবেক হেভিওয়েট নেতারা যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারায় ভিড়ছেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে বিষয়টি এখনই স্বীকার করতে চাচ্ছেন না বিকল্পধারার নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত (মহাজোটে যোগ দেওয়া) এখন পর্যন্ত আমরা নিইনি। তবে নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের দিন ড. কামাল হোসেনের বাসার দরজা থেকে পুত্র মাহী বি. চৌধুরীসহ ফিরে আসা বি চৌধুরীর জন্য ছিল চরম অপমান এবং বিব্রতকর। সে কারণে ড. কামাল হোসেন এবং তার জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে মোকাবিলায় প্রয়োজনে আওয়ামী জোটে যেতে আপত্তি নেই বি. চৌধুরীর।
এর আগে, সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার প্রস্তাবে রাজি হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতেও বিকল্পধারার আপত্তি নেই।
আরও পড়ুন: বিকল্পধারা ‘ভাঙার’ পেছনে বিএনপিকে দুষছেন মাহী বি চৌধুরী
ওদিকে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমমনাদের জন্য ১০০ আসন ছেড়ে দিতে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকল্পধারার চাওয়া আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিকল্পনায় মিল থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই মেরুর দুই দলকে একই মেরুতে দেখা যেতে পারে।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর