চট্টগ্রামে মা-মেয়ে খুন
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৫২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে নিজ বাসায় শ্বাসরোধ করে বৃদ্ধা মা ও মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পর পালিয়ে গেছে মেয়ের স্বামী। তাকে হত্যাকারী বলে সন্দেহ করছে পুলিশ ও নিহতদের স্বজনরা।
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানাজনি হয়। এসময় এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ নগরীর ডবলমুরিং থানার গায়েবি মসজিদ লেনের বিপরীতে মগপুকুরের পশ্চিম পাড়ে আব্দুল আলীর ভবনে ওই বাসার সামনে ভিড় জমায়।
নিহতরা হলেন— হোসনে আরা (৬০) ও তার মেয়ে পারভিন আক্তার (২০)।
হোসনে আরা কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ধনপতি গ্রামের মৃত বার মিয়ার স্ত্রী। তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে সোহেলকে নিয়ে হোসনে আরা আব্দুল আলীর কলোনির একটি সেমিপাকা ঘরে ভাড়া থাকতেন। পাশের ঘরে স্বামী মো. মতিনের সঙ্গে থাকতেন হোসনে আরার মেয়ে পারভিন। মতিন রিকশাচালক ও পারভিন পোশাক কারখানার কর্মী। সোহেলের স্ত্রী থাকেন কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে।
স্থানীয় একটি বেকারির কর্মচারী সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রাতে বেকারিতে থাকি। সকালে বাসায় আসি। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার দিকে বাসায় এসে দেখি আমাদের রুমের দরজা আলগা অবস্থায় আছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখি, আমার মা বিছানায় শক্ত হয়ে পড়ে আছেন। পাশে আমার বোনের কক্ষের দরজা তালা লাগানো দেখি। তখন আমি আমার মেজ বোনের বাসায় যাই।’
মেজ বোন রেশমি আক্তারও একই এলাকায় স্বামীসহ থাকেন। রেশমি সারাবাংলাকে বলেন, ‘খবর শুনে দৌড়ে আসি। ততক্ষণে বাসার সামনে অনেক লোক। লোকজন জানালা দিয়ে দেখতে পায়, আমার ছোট বোন পারভিনের লাশও বিছানায় পড়ে আছে।’
রেশমি জানান, দেড় বছর আগে মতিনের সঙ্গে পারভিনের বিয়ে হয়। মতিনের বাড়িও কুমিল্লায়। সিলেটে তার একটি ভাঙারি দোকান ছিল। বিয়ের পর পারভিনকে নিয়ে মতিন সিলেটে চলে যান। সেখানে পারভিনের ওপর বিভিন্ন সময় অত্যাচার করত মতিন। সে নেশাগ্রস্ত ছিল।
রেশমির স্বামী সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে গত রমজানে পারভিন মুরাদনগরে বাবার বাড়িতে চলে আসে। ঈদের পর মতিন তাকে আনতে মুরাদনগর যায়। এসময় পারভিনের মামার মধ্যস্থতায় সে আবারও মতিনের সঙ্গে সিলেটে যায়। একমাস আগে মতিন ও পারভিন চট্টগ্রাম নগরীতে আসেন। এসময় মতিন তার শ্বাশুড়ির কাছে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-মারধরের জন্য ক্ষমা চান। তখন শ্বাশুড়ি তার বাসার পাশে খালি বাসা ভাড়া করে তাদের রাখেন।
রেশমি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মতিন সবসময় ঝামেলা করত। আমার মায়ের হাতের রান্না ভালো না— এটা বলে কয়েকদিন আগে থেকে হোটেলে ভাত খাওয়া শুরু করে। একবার আমার মাকে ছুরি নিয়ে মারতে যায়। গতকাল (সোমবার) দুপুর থেকে সে আবারও ঝগড়া শুরু করে। রাতে আমার বোনের (পারভিন) সঙ্গেও তার ঝগড়া হয়। এসময় সে আমার মা ও বোনকে গালিগালাজ করে। তখন আমার বোন-মাকে গালিগালাজের প্রতিবাদ করে।’
সাইফুল ও রেশমির সন্দেহ, গভীর রাত থেকে ভোরের মধ্যে কোনো একসময় মতিন দু’জনকে খুন করে পালিয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, গলা টিপে দু’জনকে খুন করা হয়েছে। যেহেতু মতিন পালিয়ে গেছে, তাকেই সন্দেহ করছি। তাকে ধরার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর