রায়ে স্তম্ভিত বিএনপি, সংলাপের ফল নিয়ে সংশয়
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:৪৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর রায় বিএনপিকে স্তম্ভিত করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংলাপের আহ্বান জানানোর পর বিএনপির চেয়ারপারসনের সাজা বাড়ানোর ঘটনায় সংলাপের ফল নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ থেকেই বোঝা যায় সংলাপের আহ্বান কতটুকু আন্তরিক, এই সংলাপ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে— এ সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা অবশ্যই আছে।’
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে নিয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক শেষে তাদেরকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে মামলাটি দীর্ঘকাল ধরে চলছিল, আজকে আবার সেই মামলার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ। এই আদেশ আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে স্তভিত করেছে, বিস্মিত করেছে। এই মামলায় নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিল। আমরা আপিল করেছিলাম, সেই আপিলের রায়ে ১০ বছর করেছে। এটা প্রায় নজিরবিহীন।’
‘একদম নজিরবিহীন না। কারণ, এই সরকারের আমলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে এ ধরনের রায় এসেছে। তিনি একটি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। সেই মামলা হাইকোর্টে নিয়ে এসে আবার তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সবাই ধারণা করেছিলেন খালেদা জিয়া খালাস পেয়ে যাবেন। কারণ, জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতিতে তার কোনো ইনভলমেন্ট নেই। কোনো সাক্ষীই তার ইনভলমেন্ট প্রমাণ করতে পারেননি। এই অস্বাভাবিক রায়— যা পরিষ্কারভাবে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি। এটা খুব পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই সরকার আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধীদলকে নির্মূল করছে এবং দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) খালেদা জিয়া ওি বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে চায় এবং রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। আমাদের কাছে মনে হয়, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাও এখানে কাজ করছে। যে কারণে, চরম অসুস্থ খালেদা জিয়াকে এই সাজা প্রদান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ নিয়ে বেশি কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কীভাবে দেশ থেকে গেছেন, তা আমরা সবাই জানি। তাকে বাধ্য করা হয়েছে দেশ থেকে যাওয়ার জন্য। তারপর বিদেশে গিয়ে তিনি যে বই লিখেছেন, সেই বইয়ে এদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে পরিষ্কারভাবেই বলেছেন সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বিচার বিভাগের ওপর রয়েছে। সেই নিয়ন্ত্রণের ফলেই আজকে সরকার ইচ্ছামতো বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে।’
‘আমরা মনে করি রাজনৈতিক উদ্দেশে এই রায় দেওয়া হয়েছে এবং এই রায়ে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা এই রায় সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখান করছি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চলমান রাজনৈতি পরিস্থিতিতে বিএনপি সংলাপে যাবে কী না?- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা এখনই বলতে পারছি না। আমরা আলোচনা করব, সিদ্ধান্ত নেব, তারপর আপনাদের জানিয়ে দেব।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মো. শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ওই মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডাদেশ বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর