Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বুধবার দুপুর পর্যন্ত আদালত বর্জন আইনজীবী সমিতির


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:২৯

।।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর সাজা দেওয়ায় আগামীকাল বুধবার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বেআইনী রায়ের বিরুদ্ধে আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হলে তা প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন জয়নুল আবেদীন। প্রয়োজনে এর থেকেও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান তিনি।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনারা জানেন, গতকাল (সোমবার) দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ একটি আবেদনপত্র ডিসপোজড অফ করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশিত আদেশটি আদালতে কখন পৌঁছেছে, আমরা জানি না। নিয়ম অনুযায়ী আদেশটি সংশ্লিষ্ট কোর্টে যাবে, আবেদনটি কার্যতালিকায় আসবে, আদালত একটি নোটস দেবেন, আমরা সেখানে উপস্থিত থাকব এবং আমরা আমাদের বক্তব্য রাখব। পরে আদালত যা খুশি আদেশ দেবেন। আমরা যখন এরকম একটি আদেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, ঠিক তখনই জানতে পারলাম ওই আবেদনটি রাতের বেলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। পরে আমরা জানতে পারলাম, মামলাটি রায়ের জন্য নির্ধারিত করা আছে কার্যতালিকায়।

জয়নুল আবেদীন বলেন, সকালে আমাদের আইনজীবী বন্ধুরা এসে বললেন, ওই আদালতের একমাত্র ডিএজি, এএজি ছাড়া আর কোনো সাধারণ আইনজীবী ঢুকতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদালতটি ঘিরে রেখেছে। এর আগে আমরা এমন দেখিনি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদলতে এভাবে কর্তৃত্ব করতে পারে। আদালতে সাধারণ আইনজীবীদের প্রবেশে বাধা তৈরি করতে পারে। আজকে সে ঘটনাই ঘটেছে।

‘এর সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে, পর্যবেক্ষণ করে সাধারণ আইনজীবীরা এরই মধ্যে দাবি তুলেছেন, এর একটি যথাযথ প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। পরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে আমরা আদালত বর্জনের মতো কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করিনি। আমরা চেষ্টা করেছি আদালতের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে,’— বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সভাপতি।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে যেদিন সংবর্ধনা দিয়েছিলাম, সেদিন বলেছিলাম, সিনহা বাবু যাওয়ার পর এই বিচার বিভাগে একটি ক্ষত তৈরি হয়েছে। আর আপনার দায়িত্ব হচ্ছে সে ক্ষত রিপেয়ার করা। আজ পর্যন্ত সে ক্ষত রিপেয়ার হয়নি। এখনও বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে প্রশাসন এবং বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেও। এ কারণে এখন বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে সাধারণ আইনজীবীরা ও দেশের মানুষ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা মনে করে, এই প্রতিনিধিদের কাছে কিছুটা হলেও প্রতিকার পাওয়া যাবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে এবং এরকম একটি বেআইনি রায়ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উভয় বিভাগের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

জয়নুল আবেদীন বলেন, শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা এলে সে বাধা অতিক্রম করব। যদি কোনো বাধা তৈরি হয়, পরবর্তী সময়ে বিচার বিভাগকে সমুন্নত রাখার জন্য কঠিন কর্মসূচি দেবো। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের এই কর্মসূচি। সব পর্যায়ের আইনজীবীদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আমাদের কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জনের কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট।

এর আগে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। নিম্ন আদালতে এই মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। এই রায়ের আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, আদালত পরিবর্তনের আবেদন নিয়ে তারা গেলেও আপিল বিভাগ তাদের সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আদালত একতরফাভাবে সবকিছু করে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই আদালতে যথাযথ বিচার পাব না। এই কথা বলে আমরা একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। আদালত আমাদের সেই আবেদনটি গ্রহণ করেননি।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেএএম

অাইনজীবী সমিতি আদালত সুপ্রিমকোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর