একনেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাল্টি সেক্টর প্রকল্প অনুমোদন
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:০৪
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : রোহিঙ্গাদের জন্য মাল্টি সেক্টর সহায়তাসহ ২৪ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, এই ২৪ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ১৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৩০৬ কোটি চার লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ হাজার ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাধারন অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যতদিন কক্সবাজারে থাকবেন ততদিন তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তাদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করছি। যখন তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবেন তখন সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরা এসব অবকাঠামোর সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। কেননা রোহিঙ্গাদের কারণে তারা অনেক কষ্ট ভোগ করছেন। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অনেক সংস্থা ও দেশ অনুদান দিচ্ছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মাল্টি সেক্টর প্রকল্পটির প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক হাজার ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এতে সাহায্যে করেছে বিশ্বব্যাংক। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাষণ, আশ্রয় শিবিরের ভেতরে সড়ক, ফুটপাথ, বাতি, হাটবাজার উন্নয়ন, যোগাযোগকারী সড়ক, সেতু, সাইক্লোন সেল্টার, মাল্টিপারপাস কমিউনিটি কেন্দ্র, অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ইত্যাদি কাজ অতি জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করা প্রয়োজন। আশ্রয় শিবিরগুলোতে মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তা দিলেও তা সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত।
ডিজিএফআই এনালগ পদ্ধতিতে চলছে উল্লেখ করে আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘তাদের ডিজিটাল করতেই ডিজিএফআই শক্তিশালিকরণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে অনেক খারাপ অ্যাপসও আছে। কিভাবে আগামী প্রজন্ম এসব হজম করবে জানিনা। ফেসবুকে অনেক গুজব ছড়ানো হয়। এজন্য আইন করা হয়েছে। সেই আইন বাস্তবায়নে ডিজিএফআইকে শক্তিশালি করা হচ্ছে। এতে সাইবার অপরাধ ও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম কমে আসবে বলে আশা করছি।’
মন্ত্রী বলেন, গত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মোট ১৪৮টি একনেক বৈঠক হয়েছে। এসব একনেকে ১ হাজার ২৯৭টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, একনেকে ডাকঘরগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ই-কর্মাসসহ বিভিন্ন নতুন কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শহীদ মুক্তি যোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণের পাশাপাশি যেখানে গণহত্যা হয়েছে, সেখানকার গণকবরে যারা শায়িত আছেন তাদের নাম খুঁজে বের করে তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের নাম পাওয়া যাবেনা, সেখানে লিখতে হবে অজানা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব পুলিশের জন্য পর্যায়ক্রমে আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক জেলায় একটি করে ১০ তলা ভবন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
একেনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ, এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া, ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এক থেকে পাঁচ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা,ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়সহ সড়কের নিরাপত্তা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ডিজিএফআই এর টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০ তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় সংশোধিত) খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানী এভিনিউ-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ন্যাশনাল একাডেমী ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ঢাকায় বিসিক কেমিকেল পল্লী স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেইজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে ও জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/এসএমএন