সন্তানের ‘খুনিদের’ দেখে…
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : সন্তান খুনের মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কখনও মিছিল করছেন, কখনও আড্ডা দিচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব বা শিক্ষকদের সঙ্গে।
ক্যাম্পাসে তাদের দাপট দেখে স্থির থাকতে পারেননি নৃশংসভাবে খুন হওয়া ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তাই সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে যান ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের সামনে। বৃষ্টির মধ্যে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে আকুতি জানান হত্যাকারীদের বিচারের।
জাহেদা আমিন চৌধুরীও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত আছেন। এর আগেও সন্তান হত্যার বিচারের আকুতি জানিয়ে একাই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
জাহেদা আমিনের বড় মেয়ে জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী নীপা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভর্তি পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষায় প্রতিদিন আম্মার ডিউটি চলছে। গতকাল খুনিদের কয়েকজনকে ক্যাম্পাসে মিছিল করতে দেখেন। রাতে আম্মা বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করেন। আজ সকালে দেখতে পান, কয়েকজন খুনি চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন।’
‘এরপর আম্মা একটা পোস্টার ঝুলিয়ে অনেকক্ষণ মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। বৃষ্টি পড়ছিল। দিয়াজের বন্ধুরা অনেকে গিয়ে আম্মাকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি শোনেননি। আম্মার এক কথা, খুনিদের যতদিন বিচার না হবে, ততদিন তিনি প্রতিবাদ করবেন। পরে আমরা গিয়ে আম্মাকে নিয়ে আসি’, যোগ করেন নীপা।
জাহেদা আমিনের ছেলে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় নিজ কক্ষ থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উফে আসে, আত্মহত্যা নয় দিয়াজকে খুন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর ২৪ নভেম্বর জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম জিসান, ছাত্রলীগ কর্মী আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আব্দুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
ওই মামলায় একমাত্র আনোয়ার হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যান। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
মামলার আসামি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবাই চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন