Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নতুন যেকোনো ব্যাংকেরই অনুমোদন অযৌক্তিক’


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:০৫

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: নতুন করে যেকোনো ব্যাংকের অনুমোদনকেই ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতিতে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন ব্যাংকের পরিচালনা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকটি ‘নতুন কোনো সেবা’ নিয়ে আসতে পারবে না বলেও মনে করছেন তারা।

‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি ব্যাংককে সোমবার (২৯ অক্টোবর) অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই ব্যাংকের মালিকানা বাংলাদেশ পুলিশের। এটি চালু করার প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট (বিপিডব্লিউটি)।

এছাড়া, বিবেচনায় থাকা তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন এই মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলদেশ ব্যাংক। আপাতত অনুমোদন না পাওয়া ওই তিনটি ব্যাংক হচ্ছে, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, পিপলস ব্যাংক লিমিটেড ও সিটিজেন ব্যাংক।

ব্যাংকের অনুমোদন পেতে ৪০০ কোটি টাকার মূলধন দেখাতে হয়। অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক সব শর্তই পূরণ করেছে। আপাতত অনুমোদন না পাওয়া ব্যাংকগুলো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনুমোদন না পাওয়া ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে মূলধনের কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু বিবেচনায় আসে নি, তাই মূলধন নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। তাদের কাগজপত্রে সমস্যা ও কর সংক্রান্ত মামলা থাকায় অনুমোদন পায়নি।’

বেঙ্গল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বেঙ্গল গ্রুপ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান। আর প্রস্তাবিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিন। ব্যাংকটির অনুমোদন না পাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে কর সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। বিষয়টি থেকে তারা অব্যাহতি পেলে পরবর্তীতে তাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

নিজ কার্যালয়ে নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। সোমবারের বোর্ড সভায় তার যাবতীয় সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, বাইরের অর্থ দেখাতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এক ধরণের অনুমোদনের দরকার হয়। কাগজপত্রে তা সেভাবে দেখানো হয়নি। জানা গেছে, ব্যাংকটির আবেদনে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম।

অন্যদিকে, সিটিজেন ব্যাংকের তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এদিকে, দেশে বর্তমানে ৫৮ টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯। একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারি ও তারল্য সংকটের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বিব্রত সরকারও। তবে, খাতটির নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেও শেষ সময়ে সরে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তিনিও একাধিকবার জানিয়েছেন, দেশে নতুন করে আর কোনো ব্যাংকের দরকার নেই। বরাবরের মতোই অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন, ব্যাংকিং খাতকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফেরানোই বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তারপরেও নতুন একটি ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সারাবাংলা কথা বলেছে দু’জন অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কয়েক বছর আগে আসা নতুন ব্যাংকগুলোর প্রতিও কারো আস্থা নেই। নতুন ব্যাংক নতুন করে কোনো সেবা নিয়ে আসবে বলেও আমার মনে হয়না। এছাড়া দক্ষ লোকবল ও কর্মসংস্থানের যোগান দেয়াও কষ্টসাধ্য হবে বলে আমি মনে করি।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক এই গর্ভনর আরও বলেন, ‘রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বেশিরভাগ সময় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনো উপকারভোগী গোষ্ঠিকে সামনে রাখা হয়। তবে, এ যুক্তিতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া ঠিক নয়। ব্যাংক তো সবার জন্য। সার্বিকভাবে আমি বলবো নতুন কোনো ব্যাংকেরই অনুমোদন কোনোভাবেই যুক্তি সঙ্গত নয়।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফোলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চতুর্থ প্রজন্মের যে ৯ টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, তারাই ঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এখন পঞ্চম প্রজন্মের ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে, এটা কাম্য হতে পারে না। নতুন ব্যাংক আসলে তাদের দেখভাল নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের চেয়ে পুরাতন ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরানোতেই প্রাধান্য দেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর