Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উন্নয়নের পথেই বাংলাদেশ: মার্শা বার্নিকাট


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ২০:২১

মার্সা বার্নিকাট, ফাইল ছবি

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়েই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (ক্রস রোড) বাংলাদেশের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে বাংলাদেশ যুক্ত হয়ে নিজেদের উন্নয়ন সুবিধা ঘরে তুলবে।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) তার বিদায়ী প্রেস কনফারেন্সে এই কথা বলেন। প্রেস কনফারেন্সটি রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য মার্শা বার্নিকাট বিগত ২০১৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকায় এসে পৌঁছান। ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে পরিচয় পত্র পেশের মধ্য দিয়ে বর্ষীয়ান এবং অভিজ্ঞ কূটনীতিক মার্শা বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

বিগত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পরিচয়পত্র পেশের সময় মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখি এবং আমরা জানি যে উভয় দেশের জনগণই উপকৃত হয় যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করি, যা আমরা অনেক বিষয়েই করে থাকি।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে বিদায়ী প্রেস কনফারেন্সে মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করেছি। আমি কেমন করেছি তা এই দেশের মানুষ বলতে পারবে। তবে বর্তমানে ঢাকা-ওয়াশিনটন সম্পর্ক যে মাত্রায় বিরাজ করছে, আমি তাতে খুবই খুশি। নিরাপত্তা, পিস কিপিং, কাউন্টার টেরিরিজমসহ বেশকিছু ইস্যুতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, ‘রোহিঙ্গা এখন বিশ্বের অন্যতম একটি সংকট। এই সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। এরই মধ্যে এই সংকট মোকাবেলায় ওয়াশিংটন ঢাকাকে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।’

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, অবাধ, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ট এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ যে প্রতিজ্ঞা করেছে তা রক্ষা করবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবগুলো রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব রয়েছে। সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সকলেরই দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর জোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য সরকার যে মনোভাব দেখিয়েছে তা ইতিবাচক। সকল সমস্যার সমাধান সংলাপে সম্ভব। সংলাপ বিশ্বব্যাপী একটি ইতিবাচক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’

বিদায়ী প্রেস কনফারেন্সে সংবাদকর্মীদের মোট ১২টি প্রশ্নের জবাব দেন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বলেন, ‘আমি যখন বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছি এবং এখন বিদায় বেলা, এই দুই ক্ষণের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। কেন না বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ খুবই জটিল।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আইন নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় অনেকগুলো দেশই আপত্তি এবং উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।’

মার্শা বার্নিকাট আগামী ২ নভেম্ববর ঢাকা ছেড়ে যাবেন। বার্নিকাটের স্থানে নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার আগামী ১৮ নভেম্বর ঢাকা আসবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেওয়ার আগে মার্শা বার্নিকাট একজন মিনিস্টার-কাউন্সিলর পর্যায়ের পেশাদার ঊর্ধ্বতন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য হিসেবে বিগত ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবসম্পদ ব্যুরোতে উপসহকারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাবেক মিশন প্রধান ও দুবার মিশন উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখায় তার দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনার প্রমাণ রেখেছেন। ওয়াশিংটনে তার পূর্ববর্তী দায়িত্ব ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি কাজে লাগান।

বিগত ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট সেনেগাল এবং গিনি-বিসাউ এর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোতে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ ব্যুরোতে ঊর্ধ্বতন পরিচালক এবং পেশাজীবী উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তিনি বার্বাডোস যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস (২০০১-২০০৪) ও মালাওয়ি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের (১৯৯৮-২০০১)  মিশন উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মরোক্কোতে যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেটের প্রধান কর্মকর্তা বা ‘প্রিন্সিপাল অফিসার’ (১৯৯৫-১৯৯৮), ভারতের নয়া দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি পলিটিক্যাল কাউন্সিলর (১৯৯২-১৯৯৫) হিসেবে কাজ করেছেন।

এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দপ্তরে ভারত ও নেপালের ডেস্ক অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।

ডেপুটি সেক্রেটারি জন হোয়াইটহেড-এর বিশেষ সহকারী, অপারেশনস সেন্টারের পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা, ফ্রান্সের মার্সেই এর কনস্যুলার কর্মকর্তা ও মালির বামকোতে রাজনৈতিক/কনস্যুলার কর্মকর্তা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ১৯৭৫ সালে লাফায়েত কলেজ থেকে স্নাতক ও ১৯৮০ সালে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরেন সার্ভিসে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরষ্কার পেয়েছেন বার্নিকাট। ছয়বার ‘সিনিয়র ফরেন সার্ভিস পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড’, দুবার ‘সুপিরিওর অনার অ্যাওয়ার্ড’, চারবার ‘মেরিটরিয়াস’ ও একবার ‘ওয়ান গ্রুপ মেরিটরিয়াস অনার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ফরাসি, হিন্দি ও রুশ ভাষায় পারদর্শী।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

বার্নিকাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর