৩ বছরে অভিবাসন ব্যয় কমেছে ১০ শতাংশ
৩০ অক্টোবর ২০১৮ ২১:০৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: গত তিন বছরে টাকার অংকে অভিবাসন ব্যয় ১০ শতাংশ কমেছে। এই কমার হার বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও লক্ষ্য করা গেছে বলে এক জরিপে জানা গেছে। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশনের (এসডিসি) সহযোগিতায় জরিপটি পরিচালনা করে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)।
আজ মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে জরিপের ফলাফল সংক্রান্ত ‘ইমপ্যাক্ট অব মাইগ্রেশন অন ইনকাম, গ্রোথ অ্যান্ড পোভার্টি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে রামরু।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, গত তিন বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৭) বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অভিবাসন ব্যয় কমেছে। ২০১৪ সালে জরিপে দেখা গেছে পরিবার থেকে যেসব পুরুষ অভিবাসন করেছেন তাদের গড়ে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের ভেতরে যারা অভিবাসন করেন, তাদের খরচ করতে হয় ৩ লাখ ৪২ হাজার ২৫৪ টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে টাকার অংকে অভিবাসন ব্যয় কমেছে ১০ শতাংশ।
ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, তবে মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে আনলে প্রকৃত ব্যয় ২৫ শতাংশ কমে আসে। এ ছাড়া নারীর অভিবাসন ব্যয় পুরুষ অভিবাসন ব্যয়ের এক চতুর্থাংশ। মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে আনলে তাদের প্রকৃত অভিবাসন ব্যয় কমেছে ২১ শতাংশ।
রেমিটেন্স প্রবাহের তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের তুলনায় পুরুষ কর্মীদের রেমিটেন্সও কমে গেছে ব্যাপকভাবে। টাকার অংকে তাদের রেমিটেন্স কমেছে ১১ শতাংশ, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে আনলে প্রকৃত রেমিটেন্স কমেছে ২৬ শতাংশ। নারী কর্মীর, টাকার অংকে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি আমলে নিলে নারী কর্মীর প্রকৃত রেমিটেন্স ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
এ ছাড়া জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, গত তিন বছরে আন্তর্জাতিক, অভ্যন্তরীণ এবং অনঅভিবাসী সব পরিবারই কিন্তু ভোগ (কনসাম্পশন) বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী পরিবারে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী পরিবারগুলোতে ভোগ বেড়েছে ৩০ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর ক্ষেত্রে বেড়েছে ২১ শতাংশ এবং অনঅভিবাসীদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। খাতভেদে অভিবাসী এবং অনঅভিবাসী পরিবারগুলো ভোগের প্রবৃদ্ধিতে ভিন্নতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী পরিবারগুলো, অভ্যন্তরীণ ও অনঅভিবাসী পরিবারের তুলনায় দ্বিগুণ খরচ করে থাকে। তবে শিক্ষা খাতে খরচের প্রবৃদ্ধির হার বাকি দুধরনের পরিবার হতে আন্তর্জাতিক পরিবারের কম।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন এই গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন যে, জাতীয়ভাবে ২০১৬-১৭ বছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স প্রেরণ বৃদ্ধি হয়েছে বলে যে দাবি করে থাকে তা এই গবেষণা চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ তৃণমূল পর্যায়ের ডাটা যা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স আহরণের তথ্য সংগ্রহ করেছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে যে রেমিটেন্স কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনোমিস্ট ড. ফয়সাল আহমেদ মনে করেন, ভোগ এবং দারিদ্র সম্পর্কে রামরুর গবেষণায় পাওয়া তথ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুইস অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড মিস এলসেসর মনে করেন যে, পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক অভিবাসন ঋণ প্রাপ্তির সুযোগে যে ঘাটতি রয়েছে সেগুলো যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
ড. তাসনিম সিদ্দিকীর নের্তৃত্বে এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন ড. অনন্ত নীলিম, ড. সি. রাশাদ শাবাব এবং মাহমুদুল হাসান।
নারী অভিবাসনের অবস্থান তুলে ধরে জরিপে আরও বলা হয়, অভিবাসী নারীদের ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটা এবং বিধবা নারীর সংখ্যাই বেশি। অভিবাসনের ফলে এসব পরিবারের আয় এবং অবস্থান আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে বলে বলা হয় জরিপে।
তবে সাধারণত পুরুষ কর্মীর তুলনায় নারী কর্মীর বাৎসরিক আয় বৃদ্ধির সুযোগ কম এবং নারী কর্মী পুরুষের তুলনায় কর্মক্ষেত্রেও সীমিত জানিয়ে জরিপে বলা হয় মাত্র তিনটি প্রধান পেশায় ৮০ শতাংশ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। অথচ মাত্র ২৮ শতাংশ পুরুষ বিদেশে মাত্র তিনটি পেশায় কাজ করছেন। পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকের চাকরির মধ্য দিয়ে উপরের স্তরে পেশায় যাওয়ার সুযোগ কম। পুরুষ শ্রমিক তিন বছরের পাঠানো রেমিট্যান্সে অভিবাসন ব্যয় তুলে আনতে পারলেও নারী শ্রমিকরা তাদের খরচ তুলে ফেলতে পারেন এক বছরেই।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই