Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরে আলোচনায় আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:১১

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা : সংলাপে সংবিধানিক প্রক্রিয়ার বাইরের কোনো বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধান সম্মত যেকোনো বিষয় নিয়ে সদ্য গঠিত জোট ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা হতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নির্বাচনের আগে সকল দলের সভা সমাবেশ নির্বিঘ্ন করা, নির্বাচন কমিশন, ইভিএম ব্যবহারসহ নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহ সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সংবিধান সংশোধন করা এবং আদালতের বিষয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার ভিত্তিতেই সংলাপে বসতে চায়। এতে সংবিধানের বাইরে বেশকিছু দাবি রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব জানা গেছে।

এদিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে যাবে বলে ঐক্যফ্রন্ট থেকে জানানো হয়। প্রতিনিধি দলে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডি থেকে আ স ম আব্দুর রব, ঐক্য প্রক্রিয়ার ও স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংলাপ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা হবে না। জেলখানায় যে আছেন, তিনি যদি অপরাধী হন, আমি নাম করেই বলি খালেদা জিয়া, তিনি যে টাকা মেরেছেন এ কথা প্রমাণ হয়েছে। প্রমাণ হওয়ার পরে তাকে নিয়ে সংলাপে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এছাড়া এই মুহূর্তে সংবিধান সংশোধনেরও কোনো সুযোগ নেই। তবে আমরা আশাবাদী এই সংলাপ থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংলাপে এই মুহূর্তে সংবিধানের বাইরে কোনো আলোচনা করার সুযোগ নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ সংলাপ সরকারের সঙ্গে নয়, এ সংলাপ আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এ সংলাপ আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে। আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তারাও চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করতে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং, সভা-সমাবেশে সমান অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাদের আলোচনার তালিকায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আছে। দুয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো আইন-আদালতের বিষয়। আবার দুয়েকটি বিষয় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের। এছাড়া আরও কিছু দাবি আছে যেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি, কিন্তু সম্পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এই সংলাপে বসছে। আমরা আশা করছি সংলাপে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফার ভিত্তিতে সংলাপে বসবে বলে জানিয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই মুল আলোচনা হবে বলে তারা ধারণা করছেন। তারা বলছেন, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আদালত সাজা দিয়েছেন। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানের বাইরে কিছু করা এখনই সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগের একাধিক জেষ্ঠ্য নেতা জানান, এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার মধ্যে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ আরো বেশ কিছু দাবি রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দাবি আছে যা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ আলোচনার তালিকায় থাকা দুয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো আইন-আদালতের বিষয়। আবার দুয়েকটি বিষয় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের।

তারা জানান, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের অধীনেই হতে হবে। এই মুহূর্তে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রতিক্রিয়াও সংবিধান অনুযায়ী হবে। এখানে বাইরে থেকে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। আর যদি কোনো কারণে সংবিধান সংশোধনের প্রশ্ন আসে তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা সম্ভব কি না এটাও ভাবার বিষয় রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের কথা বলা হয়েছে। এতে আপত্তি থাকার কথা নয়।

সংলাপের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আগামী ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে দাওয়াত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান এবং চিঠি হস্তান্তর করেন।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ এর পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সব বিষয় আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১ নভেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ৭টায় আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

এর আগে, গত রোববার (২৮ অক্টোবর) সরকারের সঙ্গে সংলাপ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সারাবাংলা/এইচএ/একে

আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর