জনবসতি এলাকায় রাস্তা দখল করে বালুর ব্যবসা!
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:২৭
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ জেলার উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়নের মালির পাথর ও ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় সরকারি রাস্তা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছেন প্রভাবশালীরা। এতে রাস্তাঘাট ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকায় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বালুর ব্যবসা করছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন মুক্তারপুর এলাকার মামুন, মালির পাথর ও ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার ওমর ফারুক, নজরুল দেওয়ান, রহিম, আরমান, ইকবাল, সবুর খানসহ অন্যরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু ব্যবসায়ীরা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই এবং কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে এ সব ব্যবসা। বালু ব্যবসায়ীদের কারণে মুন্সীগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটির মালির পাথর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাঁধটির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। তাছাড়া ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ওপর দিয়ে নদী থেকে ড্রেজারের পাইপ বসিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
রাস্তার পাশে এ ধরনের বালু বিক্রির একাধিক গদি হওয়ায় বাতাস এলেই বালু উড়ে পথযাত্রীদের নাকে মুখে ঢুকছে। রাস্তার ওপর জমে আছে তিন স্তরের বালু। গাড়ি চলার সময় বালু বাতাসে উড়ে গাড়ীর যাত্রী ও পথচারীদের গায়ে এসে কাপড়চোপড় নোংরা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় হৃদয় সূত্রধর, উজ্জল শেখ, পুলক সাহা, রহিম মিয়া, মামুন দেওয়ান সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করে বলেন, দুপুর হলে এলাকাটি দিয়ে রিকশায় চড়ে যাওয়া কিংবা পায়ে হেঁটে চলাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া রাস্তার ওপর দিয়ে শত শত মালবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। একটি গাড়ি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত বালু বাতাসে উড়তে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী আরমান শেখ সারাবাংলাকে বলেন, এটা গ্রামের রাস্তা। আমরা এখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। জানি, এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু সবাই তো করছে। তাদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।’
পরে একাধিক বালুর গদিতে গিয়ে মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে কর্মচারীদের পাওয়া গেলেও তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদফতর কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাস্তার পাশে জনবসতি লোকালয়ে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এমন বালুর স্তূপ পরিবেশ আইন কখনোই সমর্থন করে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বালু ব্যবসার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এটার কোনো লাইসেন্স আমরা দিইনি। বালু বিষয়টি আমরা দেখি না। শুধু কল-কারখানার দূষণের বিষয়টি আমাদের আওতাভুক্ত।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সায়েলা ফারজানা জানান, মানুষের বসবাসকৃত স্থানে সরকারি রাস্তা অবৈধ দখল করে তারপাশে এসব অবৈধ বালুর ব্যবসা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বিষয়টি সরজমিনে খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রাস্তার পাশে ড্রেজারের পাইপ লাগিয়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/একে/টিআর