বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসিকে নির্দেশ
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৩৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ৭ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তির রিট আবেদনের শুনানি শেষে অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দিয়ে ওই রিট একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি দণ্ডিতরা পদে থাকতে পারবেন না— বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে বাদ দেওয়া এমন বিধান কেন বেআইনি ও সংবিধানের ৬৬ (ঘ)-এর পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করায় ঢাকার কাফরুলের বিএনপিকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মমতাজ উদ্দিন মেহেদী।
তিনি জানান, এই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ (বুধবার) এ আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপির দণ্ডিতদের সদস্যপদ স্থগিতের ধারা বিলুপ্ত করে আনা সংশোধনী কেন বেআইনি ও সংবিধানের ধারার পরিপন্থী হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন। স্থানীয় সরকার সচিব, সিইসি ও ইসি সচিবসহ বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, মোজাম্মেল হোসেনের দায়ের করা রিটে বলা হয়েছে, বিএনপির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমি বিএনপিতে যোগ দেই। কিন্তু বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদ বাতিল করায় আমি সংক্ষুব্ধ। ওই অনুচ্ছেদে বলা ছিল, দুর্নীতিপরায়ণ কোনো ব্যক্তি বা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। কিন্তু বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দুর্নীতর দায়ে দণ্ডিত হতে পারেন। এ আশঙ্কায় তারা গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদ বাতিল করে সংশোধনী আনে এবং সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
এ বছরের জানুয়ারিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সেই সংশোধনীসহ বিএনপির নতুন গঠনতন্ত্র চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি জমা দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। তাতে দেখা যায়, বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।
‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামের ওই ধারায় বলা ছিল, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হবেন। তারা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।”
বিএনপি নির্বাচন কমিশনে তাদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার ১০ দিন পরই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারিত ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ওই সময় বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলেও যেন তারা দলের দায়িত্বে থাকতে পারেন, সেই সুযোগ করে দিতেই বিএনপি কৌশলে এই সংশোধনীর আশ্রয় নেয়।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলোপকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মত দেন বিশ্লেষকরা। যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই সংশোধনী নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ অনেক নেতাই বলেছেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিএনপি স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে প্রমাণ করলো নিজেদের।
সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর